বিদ্যুৎ লুটেরাদের পকেট ভারী করতে জনগণ নিঃস্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৩, ৯:৪৬:২৮ অপরাহ্ন
বর্তমানে দেশের সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে জ্বালানী তথা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যয় মেটাতে। আয় না বাড়লেও উপর্যুপরি বাড়ছে জ্বালানীর দাম। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি দশা। অনেকে এখন এই ভেবে আতংকিত যে, যেভাবে মাসে মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, তা চলতে থাকলে, আয়ের অধিকাংশ অর্থই চলে যাবে বিদ্যুতের বিল মেটাতে। তখন বেঁচে থাকতে হবে এবং আয় করতে হবে না খেয়ে না পরে শুধু বিদ্যুত বিল পরিশোধের জন্য। অর্থাৎ আলোকিত ঘরে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।
দেখা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে দেশের সিংহভাগ মানুষের আয় না বাড়লেও বেড়েছে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্য ও সেবার দাম। বেড়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। এ অবস্থায় আয়ের সাথে ব্যয়ের সংগতি হারিয়ে গেছে। অনেকে খাবার দাবারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় কর্তন করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে ইতোমধ্যে ব্যয় সংকোচনের সবটুকু করে ফেলায় ব্যয় আর কমাতে পারছেন না। আধমরা অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন। প্রতিনিয়ত আর্থিক টানাপোড়েনে মরে যাওয়াই ভালো, এমন মন্তব্য করছেন। কিন্তু জনগণের এই দুরবস্থায় ক্ষমতাসীনরা নির্বিকার, উদাসিন। জনগণ মরলে মরুক, বাঁচলে বাঁচুক, এতে তাদের যেনো কিছুই যায় আসে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিক তথা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের ভাগিদারদের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতি বছর প্রদান করা হলেও ভর্তুকি হ্রাসের নামে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অবৈধ ফায়দা প্রদান অব্যাহত আছে। বিদ্যুতের বিতরণ সংস্থাগুলো মুনাফা করলেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কমানো দূরে থাক, প্রতি মাসে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর মুনাফা কিছুটা কমিয়ে গ্রাহকদের সুবিধা দিতে কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, এবার ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আরো ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মার্চ মাসের বিদ্যুতের বিলেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। গত মঙ্গলবার রাতে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে গত জানুয়ারীতে দুই দফায় বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এটি জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারীতে দুই ভাগে কার্যকর হয়েছে। সবশেষে ৩০ জানুয়ারীর প্রজ্ঞাপনে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারী পর্যায়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার এবং খুচরো পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম।
বলা বাহুল্য, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়ে শিল্পোৎপাদনে এবং পণ্যের বাজার দরে। এতে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হন ভোক্তা জনগণ। এভাবে সমন্বয়ের নামে প্রতি মাসে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে দেশের সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। জ্বালানী তথা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের চরম আর্থিক কষ্ট করতে হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পথে নামতে হবে কিংবা গাছতলায় ঠাঁই নিতে হবে কোটি কোটি মানুষকে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আগেই এ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এমন দাবি সচেতন মহলের।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাথে ইতোপূর্বে করা অন্যায় ও অযৌক্তিক চুক্তি বাতিল করে ক্যাপাসিটি চার্জের ফাঁস থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে সর্বাগ্রে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণকারী অর্ধডজন কোম্পানীর কাছ থেকে উৎপাদন খরচ ওঠে আসে এমন দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে হবে পিডিবিকে। এটা করা হলে ভর্তুকির প্রশ্ন আসবে না। আর ভর্তুকির নামে মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিলও বাড়াতে হবে না। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে সরকারের শীর্ষ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।