সিলেটে গ্যাস সিলিন্ডারে অস্থিরতা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১২:১৯:৫৩ অপরাহ্ন
পাইকারী-খুচরা বাজারে দামের ফারাক
স্টাফ রিপোর্টার : সিলিন্ডার গ্যাস নিয়ে সিলেটে রীতিমত নৈরাজ্য চলছে। গেল মাসে এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়ানোর সাথে সাথে অতিরিক্ত আরো ১০০-১৫০ টাকা বেশী দামে বিক্রি হয় ১২কেজির সিলিন্ডার। চলতি মাসের শুরু থেকে সিলিন্ডার প্রতি ৭৬ টাকা কমানোর ৪ দিন অতিবাহিত হলেও আগের থেকেও বেশী দামে সিলিন্ডার বিক্রির অভিযোগ ক্রেতাদের। বিক্রেতাদের কাছে অসহায় সিলিন্ডারের সাধারণ গ্রাহকগণ। এ নিয়ে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নিচ্ছেন বিক্রেতারা। ১২ কেজি গ্যাসের একটি সিলিন্ডার তাঁরা বিক্রি করছেন ১৬০০-১৭০০ টাকা। সম্প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর ৭৬ টাকা কমিয়েছে সরকার। কিন্তু আগের দামের চেয়েও অতিরিক্ত মূল্যে এলপিজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন গ্রাহক। শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার গ্যাস বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। মার্চে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। ঘোষিত নতুন দর বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম গত মাসে একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
বিভিন্ন এলাকার গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সরকার দাম কমালেও বিক্রেতারা সেটি মানছেন না। তাঁরা পূর্ব নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন। আবার কিছু কিছু বিক্রেতা দাম কমানোর নোটিশ জারির পর থেকে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
একাধিক বিক্রেতা জানান, বাধ্য হয়ে কেউ কেউ সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তবে চুলার সঙ্গে সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। কারণ জানতে চাইলে বললেন, সিলিন্ডার গ্যাস বেশি দামে কেনা। এখন সেই দাম ক্রেতাদের কাছে চাইলে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে হচ্ছে। এ জন্য সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বাজারে বেশি দাম দিয়েও সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও ব্যবস্থাপনা করে না। এতে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
নগরীর আম্বরখানা সেবা চুলা ঘরের স্বত্তাধিকারী আরিফুল হক দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পাইকারী কিনতেই সিলিন্ডারের দাম পড়ে ১৪৫০-১৫০০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা ১৫৫০ টাকা বিক্রি করেন। এর নিচে সিলিন্ডার বিক্রি করলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোন লাভ হবেনা। একজন খুচরা বিক্রেতা দিনে ৪/৫ টি সিলিন্ডার বিক্রি করেন। ১৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে একজন খুচরা বিক্রেতা একটা সিলিন্ডার বিক্রি করে ৫০ টাকা লাভ করবেন এটা স্বাভাবিক। অন্যথায় খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।
নগরীর বাগবাড়ী এলাকার এক সিলিন্ডার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং প্লাস্টিকের তৈরি সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। ৩৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া হোম সার্ভিস চালু রেখেছেন। এ জন্য অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা রাখেন।
নগরীর কানিশাইল এলাকার বাসিন্দা আশরাফুর রহমান চৌধুরী বলেন, ৬ জনের পরিবারে মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডার লাগে দেড়টা। গেল মাসেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে। বাড়ানোর সাথে সাথে সব দোকানে কার্যকর। আবার সরকার যখন দাম কমিয়েছে তখন দোকানদাররা বলছেন আগের দামে কেনা। তাই বেশী দামে বিক্রি করছি। সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা সাধারণ গ্রাহকগণ জিম্মি হয়ে পড়েছি
এ বিষয়ে সিলেটের সিলিন্ডার গ্যাসের অন্যতম বড় ডিলার মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কামাল আহমদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দাম কমার পর থেকে আমরা ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাস ১৪১০-১৪২০ টাকা বিক্রি করছি। কেউ আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে নিলে ১৪০০ টাকা আর আমরা পৌঁছে দিলে ১৪২০ টাকা রাখছি। তবে বেক্সিমকো ও বসুন্ধরার ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম পাইকারী বাজারে বেশী রাখা হচ্ছে। প্রতি সিলিন্ডার আমাদেরকে ১৪৫০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পাইকারী বাজারে সিলিন্ডার প্রতি ১০টাকা লাভ করছি। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম রাখছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনেই সিলিন্ডার বিক্রি করছি।