সিলেটে এআইবিডি-ডব্লিউএইচও’র সাংবাদিক কর্মশালা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মার্চ ২০২৩, ৯:৪৪:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: দুই বছরে কেবল সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ১৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২২৫ জন। এরমাঝে ২০২১ সালে ৮৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০২ জন এবং ২০২২ সালে ১১২ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৩ জন।
শনিবার সিলেটে সাংবাদিকদের নিয়ে রোড সেফটি রিপোর্টিং বিষয়ক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। এশিয়া-প্যাসিফিক ইনস্টিটিউট ফর ব্রডকাস্টিং ডেভেলপমেন্ট (এআইবিডি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও) রোড সেইফটি ইনিশিয়েটিভের অর্থায়নে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আরো জানানো হয়, সিলেট-ঢাকা হাইওয়েতে ২০২২ সালে জরিমানা আদায় করা হয় ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। এরমাঝে শুধু ওভারস্পিড কিংবা বেপরোয়া গতির কারণে জরিমানা আদায় হয় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। তবুও ঠেকানো যাচ্ছেনা দুর্ঘটনা, থামানো যাচ্ছেনা প্রণহানী।
কর্মশালায় জানানো হয়, প্রতিবছরই সড়কে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। সে অনুপাতে বাড়ছেনা রাস্তা। ২০২০-২১ অর্থবছরে নতুন যানবাহন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৩০টি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ১৫১টি।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, দেশের সড়কে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু রোড ক্রাশের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সড়ক যত উন্নত হচ্ছে যানবাহনের গতি ততই বাড়ছে সেই সঙ্গে ঘটছে মর্মান্তিক রোড ক্রাশ। এসব রোড ক্রাশরোধে দরকার সচেতনতা। আর লেখনীর মাধ্যমে মানুষের মাঝে সড়ক সচেতনতা বাড়াতে পারে সাংবাদিকরা।
কর্মশালায় বক্তারা, সড়কে প্রাণহানি কমাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন। তারা এও বলেন, সমন্বয় ও জবাবদিহিতার অভাবে সড়কে শৃংখলা আনা যাচ্ছে না। সড়ক নিরাপত্তা আইন-২০১৮ প্রণীত হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর কার্যকারিত এখনো নেই বলেও তাদের মন্তব্য।
সকালে দিনব্যাপী এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো: আনোয়ারুল ইসলাম। সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এবং কর্মশালার প্রশিক্ষক ও ঢাকা ট্রিবিউনের সিলেট ডিভিশনাল করেসপন্ডেন্ট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদিক।
উদ্বোধনকালে প্রফেসর ড. মো: আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সড়ক নিরাপত্তা। প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে প্রাণ। সরকার বা কেউই এর দায় থেকে মুক্ত নয়। তিনি বলেন, অন্যদেশগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেক আগেই গড়ে উঠেছে। অথচ আমরা এখনো এর থেকে অনেক দূরে। বাংলাদেশের সড়কে শৃঙ্খলাই ফিরছেনা। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে সেশন টু সেশন চলে কর্মশালা। এতে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন হাইওয়ে পুলিশের সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহ, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা, গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদিক, ঢাকা ট্রিবিউনের সিলেট ডিভিশনাল করেসপন্ডেন্ট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ও বাংলাদেশ বেতার সিলেটের উপ বার্তা নিয়ন্ত্রক সঞ্জয় সরকার।
প্রশিক্ষকরা সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক আইন ও এর প্রয়োগ, সলিউশন্স জার্নালিজম, পোস্ট ক্রাশ রেসপন্স, সড়ক ব্যবস্থাপনা ও ডাব্লিউএইচও’র গাইড লাইন নিয়ে আলোচনা করেন।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে কর্মরত প্রিন্ট ও ইল্কেট্রনিক মিডিয়ার ১৫ সাংবাদিক অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় ডাব্লিউএইচও-এআইবিডি আয়োজিত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন সাংবাদিক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এ বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য সাংবাদিক সিরাজুল ইসলামকে রিসোর্সপার্সনের দায়িত্ব দিয়ে একটি গ্র্যান্টস প্রদান করা হয়। এ গ্র্যান্টের আওতায় আয়োজন করা হয় এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার।