স্বচ্ছ জলের সাদা পাথরে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মার্চ ২০২৩, ৮:১৬:৪৪ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ:
দেশ বিদেশে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর। পানি পাথর আর পাহাড়ের মিলনে চোখধাঁধানো নান্দনিক এই পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে অবস্থিত সাদাপাথর ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে তার জৌলুস। বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে আগ্রহ হারাচ্ছে পর্যটকরা। যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া, পর্যটক হয়রানি, অপরিষ্কার পর্যটন কেন্দ্র, ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকা, ট্যুর গাইড না থাকাসহ আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মতো পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর থেকে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত পাথর মজুত হওয়ার কারণে ওপার থেকে পানি আসতে না পারায় সৌন্দর্য অনেকটাই হারাতে বসেছে। নদী খনন না থাকায় গত বছরের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে নদীর দু’পাশ ভেঙ্গে গেছে। ফলে এবারের বর্ষায় পর্যটকরা দাঁড়ানোর জায়গাও পাবে না। পর্যটন বাজারে বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরাও পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন পর্যটকদের।
পর্যটন কেন্দ্রের নৌকা ঘাট থেকে মূল স্পটের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। এই ১ কিলোমিটার যেতে হয় নৌকাযোগে। যার ভাড়া পড়ে নৌকা প্রতি ৮’শ টাকা। এতে মাত্র ৮ জন যাত্রী যেতে পারেন। মূলত এই নৌকা ভাড়াতেই পর্যটকদের যত অনিহা। এ নিয়ে প্রায়ই বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যায় নৌকা ঘাট ইজারাদারের লোক ও পর্যটকদের মধ্যে। ১ কিলোমিটার জায়গা নৌকাযোগে যেতে-আসতে ১ লিটার ডিজেল খরচ হয়। যার বর্তমান বাজারমূল্য ১১৫ টাকা। সেখানে একটি নৌকার ভাড়া নেয়া হয় ৮’শত টাকা। পর্যটকদের দাবি লোকাল পদ্ধতিতে নৌকা ঘাট থেকে সাদাপাথর যেতে ৩০/৪০ টাকা ও ফিরে আসতে ২০/৩০ টাকা করে নেওয়া হলে নৌকার জন্য এত হয়রানি হতো না। রিজার্ভ পদ্ধতিতে নৌকা নিতে হয় বলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটকরা। এক নৌকাতে ৮ জন করে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ৮ জনের কম হলেও ৮’শত টাকা দিতে হয়। কিন্তু ৮ জনের বেশি হলেই নিতে হয় আরেকটি নৌকা। রিজার্ভ পদ্ধতিতে নৌকা ভাড়া নেওয়ার কারণে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। আর পকেট কাটছে পর্যটকদের। ফলে পুনরায় সাদাপাথর আসতে অনিহা প্রকাশ করেন পর্যটকরা।
মূল পর্যটন কেন্দ্রে দোকানপাট থেকে বিভিন্ন খাবার ও পানীয় ক্রয় করে পর্যটকরা তার প্যাকেট ও বোতল সেখানেই ফেলে দেয়। অনেকেই আবার বাইরে থেকে রান্না করা খাবার সাথে নিয়ে আসেন পর্যটন কেন্দ্রে বসে খাবেন বলে। সেই খাবারের ময়লা ও পর্যটন কেন্দ্রের দোকানপাটের ময়লায় অপরিষ্কার হয়ে থাকে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। এ ছাড়া অনেক সময় বাচ্চাদের প্যাম্পাস পানিতে ও পাথরের উপরে দেখতে পাওয়া যায়। নৌকা দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার সময় শতশত প্লাস্টিকের বোতল ও বিভিন্ন প্রকারের ময়লা দেখতে পাওয়া যায়। যার জন্য দূষিত হচ্ছে পানি ও সাদাপাথরের পরিবেশ। জৌলুস হারাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র।
কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিজম ক্লাবের সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, পর্যটকরা আমাদের অতিথি। তাদের সুবিধা অসুবিধার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই দেখতে হবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য লোকাল পদ্ধতিতে নৌকা ভাড়া নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এতে করে ট্রাভেলাররা আসতে আরো আগ্রহ দেখাবে।
সাদাপাথর নৌকা ঘাটের ইজারাদার মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সব সময় পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ৮ শত টাকায় ৮ জন পর্যটক নৌকা দিয়ে যেতে পারেন। নদী খনন করা না থাকায় এর বেশি দেওয়া যায় না। নিজে টাকা নিয়ে কিছুটা খনন করে নৌকা যাতায়াতের উপযোগী করে রেখেছি। তা না হলে অনেক আগেই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। তিনি আরো বলেন, লোকাল পদ্ধতিতে নৌকা ভাড়া নিলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাবে না।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ৮ জানের জন্য নৌকা ভাড়া ৮ শত টাকা নেওয়া হয়। পর্যটকদের আপত্তি থাকলে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বললো। লোকাল পদ্ধতিতে নৌকা চলাচল করার কথা। কোন নৌকায় যদি ৫ জন যাত্রী হয় তাহলে আরো ৩ জনের জন্য অপেক্ষা করবে। ৮ জন যাত্রী হলে নৌকা ছেড়ে যাবে। এভাবেই চলার কথা। তবে কেউ রিজার্ভ নিলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।