চিকনাগুল: পছন্দের বাজারে গলাকাটা দাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৩, ৮:২৪:২০ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল : কয়েকদিন আগে সিলেট নগরীর উপশহরের এক যুবক বন্ধুসহ হরিপুর গিয়েছিলেন পাখির মাংস খেতে। ফেরার পথে জৈন্তুপুরের চিকনাগুল বাজারে থামেন তারা। বাইক দাঁড় করিয়ে কাঁঠাল কিনতে যান ঐ যুবক। এখানে বিক্রেতা সবাই স্থানীয় লোকজন। একজন বিক্রেতার সাথে দরদাম করে কাঁঠাল পাকা হলে কিনবেন বলে ঠিক হয়। বিক্রেতা আশ্বস্ত করেন কাঁঠালটি পাকা। তারপর তিনি তা দেখাতে গিয়ে কাঁঠাল কেটে দেখাতে যান। কিন্তু কাঁঠাল কাটার পর দেখা যায় এটি এখনও কাঁচা। তখন ক্রেতা ঐ যুবক এটি নিতে রাজি হন না। এতে ক্ষেপে যান বিক্রেতা। তিনি বলেন, কাঁটিয়েছেন যখন তখন নিতে হবে। এ নিয়ে যুবকের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। যুবকের বক্তব্য কাঁঠাল পাকা বলেই তিনি নিতে চেয়েছেন, সে অনুযায়ীই দরদাম করা হয়েছে। কিন্তু এটি কাঁচা, এই কাঁঠাল দিয়ে তিনি কী করবেন? গাছ পাকনা বলেই এতে তার আগ্রহ নইলে শহরে বাজারে কাঁঠালের কী অভাব? কিন্তু বিক্রেতা তাকে চেপে ধরেন। বলেন, তিনি কিনতে রাজি হওয়ায় কাঁঠাল কেটে দেখিয়েছেন, এখন তা নিতে হবে। যুবক শহরের লোক আর বিক্রেতা স্থানীয়, এতে যুবক বিব্রতবোধ করেন, পরে তিনি বিক্রেতাকে কাঁঠালের টাকা পরিশোধ করে সেখানেই কাঁঠাল ফেলে রেখে চলে আসেন। পছন্দের বাজারে এভাবেই বিড়ম্বনায় পড়ে চলে আসতে হয় তাকে। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে এসব ঘটনা এখন প্রায় নিত্যদিনের।
সিলেট তামাবিল মহাসড়কের পাশে চিকনাগুলে এই বাজার বসে সাপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার। স্থানীয় গাছের ফল, গৃহস্থালী খামারের দেশি মোরগ-মুরগি, ডিম, লেবু, বোম্বাই মরিচ ইত্যাদির জন্য এই বাজারের সুনাম দীর্ঘদিনের। বাড়ির উঠোন ও আশপাশের মাটিতে ব্যক্তি উদ্যোগে উৎপাদিত এসব পণ্যের কদরও খুব। বিশেষ করে যারা শহরে থাকেন কিংবা জাফলং বেড়াতে যান তারা শখ করে এখান থেকে লেবু, কাঁঠাল, মরিচ, দেশি মোরগ ইত্যাদি কিনে থাকেন। সিলেট শহর থেকে গাড়িতে মাত্র আধাঘণ্টার পথ হওয়ায় সুযোগ পেলেই শহুরে ক্রেতারা এখানে ছুটে আসেন। বাজারবারে রাস্তা পর্যন্ত চলে আসে পণ্যের পসরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিক্রেতারা যে যার মতো পণ্য নিয়ে বসেন, দরদাম হাঁকেন। দামের ব্যাপারে কোনো নিয়মনীতি নেই। বিক্রেতাদের মূল টার্গেট থাকে শহর থেকে আসা লোকজন এবং জাফলং ফেরত সিলেটের বাইরের দর্শনার্থী। যারা মূলত স্থানীয়ভাবে বাড়ির উঠোনে উৎপাদিত পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট, যারা শখ করে এসব পণ্য কিনতে থামেন। বাজারে কোনো গাড়ি দাঁড় হতে দেখলেই বদলে যায় বিক্রেতাদের চেহারা। শখের তোলা আশি টাকা এই সূত্রের ফাঁদে ফেলে দাম হাঁকা হয় আকাশচুম্বী। গলাকাটা দামে বিপাকে পড়েন ক্রেতারা। একসময় এই বাজারের ব্যাপক সুনাম থাকলেও ইদানীং সেই সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মানুষের এই বাজারের জিনিসপত্রের প্রতি আগ্রহ এখনও আছে। সবাই জানেন এখানে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। কিন্তু ভালো জিনিসের বিক্রিতারা দামের বেলায় ভালো ব্যবহার দেখাতে পারছেন না। বিক্রেতারা সবাই পরিচিত আর স্থানীয় হওয়ায় কেউ কোনো কথা বলেন না। বাজারে এক থেকে দেড়শো টাকার জাম্বুরার হালির দাম আটশো টাকা পর্যন্ত হাঁকতে দেখা গেছে। সত্তর আশি টাকার লেবুর দাম হাঁকা হয় আড়াই থেকে তিনশো টাকা। আশি থেকে একশো টাকার পাঁকা পেঁপে এখন বিক্রি হয় কেজি দরে, আর পিস হিসেবে কিনতে চাইলে ছোটোগুলোর দাম বলা হয় আড়াইশো টাকা, বড়ো হলে ইচ্ছেমতো। পছন্দের বাজারে গলাকাটা দামে তাই ক্রেতারা এখন অসহায়।