সিন্ডিকেটের কবলে মুরগি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৩, ৮:২১:৫১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট:
বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মুরগি সিন্ডিকেট। ফলে মধ্যবিত্তের আদর আপ্যায়নের শেষ অবলম্বন মুরগিও এখন নাগালের বাইরে। প্রতিনিয়ত ১০ থেকে ২০ টাকার করে বাড়ছেই মুরগির দাম। বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। তবুও মুরগির সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না তারা।
শনিবার বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র দেখা গেছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন তাদের ধরে লাভ নেই, তারা কিনে আনেন শুধু। ধরলে উপরে ধরতে হবে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তারা বলেন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে দোকানে অভিযান চালানো হয়, লোকসানের মধ্যে আরও লোকসান হয় ব্যবসায়ীদের। কিন্তু যারা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সেখানে কিছু করা হয় না।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। এ নিয়ে হইচই পড়লে ভোক্তা অধিদপ্তর ফার্ম মালিক থেকে পাইকারি ও খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীদের কাছে দামের ব্যাপারে জানতে চায়। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারও করা হয়। কিন্তু সরকারের এসব হুশিয়ারিতে কোনো নড়চড় হয়নি সিন্ডিকেটের। কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে মুরগির দাম। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, কক ৩৬০, লাল মোরগ ৪৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কিক্রি করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের বলে লাভ কী? গোড়া না ধরলে কমবে না। সরকার, ম্যাজিস্ট্রেট শুধু আমাদের ধরে। আমরা কী বেশি দাম নিতে পারি? বেশি দামেই কেনা। তাই বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। আবার চাহিদাও বেশি। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম। তাই মুরগির দামও বাড়ছে।
আর ফার্ম মালিকরা বলছেন আগে আমরা পাইকারি বাজারে মুরগি বিক্রি করতাম ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। তখন এক দিনের মুরগির বাচ্চা কিনতাম ২৫ থেকে ২৮ টাকায়। এখন আমরা এক দিনের মুরগির বাচ্চা কিনি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়। আবার বাচ্চাপ্রতি খামারে আসতে পরিবহন খরচ আগে ছিল ৩ থেকে ৪ টাকা, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়।
এছাড়া মূল যে কারণে মুরগির দাম খামার পর্যায়ে বেড়েছে তা হচ্ছে মুরগির ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। করোনাকালেও যেখানে আমরা ৫০ কেজির একটি ফিডের বস্তা কিনতাম ২১০০ থেকে ২২০০ টাকায়, সেখানে একই বস্তা এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে ৩৬৫০ থেকে ৩৭০০ টাকায়। এসব মুরগির স্টার্টার ফিড ও গ্রোয়ার ফিডের দাম বাড়ার কারণেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, ওষুধ, শ্রমিকের খরচ বাড়ায় বেড়েছে মুরগির দাম। তাই শুধু মুরগি ব্যবসায়ীদের না ধরে যারা এর পেছনে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তারা।
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ১০০ টাকার দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। তারা বলেন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ঠিক কিন্তু এত বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কমেছে বিক্রিও। লাভ এবং কর্মচারী খরচ মিটিয়ে এই অবস্থায় টিকে থাকাই দায় হয়ে যাবে। সিন্ডিকেটের কোনো মায়া দয়া নেই। তারা চায় অল্পদিনে চুষে খেয়ে নিতে।
লালবাজারের মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, সিন্ডিকেটের চাপে জনগণের সঙ্গে আমরাও জিম্মি হয়ে পড়েছি। একটি মুরগির ডিমের দাম ১২ টাকা আর এক দিনের একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৫৫ টাকা। ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের খরচ কী ৪৩ টাকা? আর ২২০০ টাকার ফিডের দাম ৩৭০০ টাকা। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি সুরাহা না হলে কোনোভাবেই মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।