চার দিন পার : সিলেটে ৭৫ শতাংশ ডিলারই পায়নি টিসিবি পণ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০২৩, ৪:৩৫:৩৪ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল :
পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুলভ মূল্যে টিসিবি পণ্যবিক্রি শুরুর ৪ দিনেও সিলেটে মিলছেনা পণ্য। সুবিধাভোগীরা দুরে থাক এখন পর্যন্ত বিভাগের ৭৫ ভাগ ডিলারই পায়নি পণ্য। গতকাল রোববার পর্যন্ত বিভাগের ২৫৫ জন ডিলারের মধ্যে ২৫-৩০ জন ডিলার পণ্য নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন খোদ টিসিবি কর্তপক্ষ। এজন্য ডিলার ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়কে দায়ি করেছেন তারা। ফলে রমজানকে সামনে রেখে সুলভ পণ্য পেতে অপেক্ষা বাড়ছে বিভাগের সাড়ে ৪ লক্ষাধিক কার্ডধারী সুবিধাভোগী পরিবারের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ৯ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি শুরু করার কথা আগের দিন (৮মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এতে বলা হয়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে সারা দেশে নিম্ন আয়ের ১ কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম দুই পর্বে পরিচালিত হবে। এই লক্ষ্যে প্রথম পর্বের কার্যক্রম বৃহস্পতিবার (৯ই মার্চ) থেকে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই বিক্রয় কার্যক্রম ডিলারদের দোকান বা নির্ধারিত স্থায়ী স্থাপনা থেকে সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ও নির্ধারিত তারিখ ও সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে। কার্ডধারী ভোক্তা সাধারণ নিজস্ব সময়ে নির্ধারিত ডিলারদের কাছ থেকে প্রথম পর্বে পণ্য সামগ্রী কিনতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ এক কেজি চিনি ৬০ টাকা দরে কিনতে পারবেন। মসুর ডাল ৭০ টাকা দরে দুই কেজি, সয়াবিন তেল লিটার ১১০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ২ লিটার, ছোলা ৫০ টাকা দরে এক কেজি এবং ১০০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ১ কেজি খেজুর ক্রেতারা নিতে পারবেন। তবে খেজুর শুধুমাত্র ঢাকা শহরে বিক্রি করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে টিসিবি পণ্য বিক্রির সরকার নির্ধারিত সময়ের ৪দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পণ্য বিক্রি শুরু করতে পারেনি টিসিবি’র তালিকাভুক্ত ডিলারগণ। এখনো টিসিবি থেকে পণ্য বুঝে পাননি বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগের ৪ জেলার অধিকাংশ ডিলার। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খোদ টিসিবি সিলেটের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা জানান, পণ্য বুঝে নেয়ার আগে তালিকাভুক্ত ডিলারগণকে টিসিবি কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলা প্রশাসনের ডিও প্রেরণ করতে হয়। এরপর ডিও লেটারের চাহিদার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য দেয়া হয়। কিন্তু রোববার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের অধিকাংশ ডিলারগণ উপজেলা প্রশাসনের ডিও লেটার সংগ্রহ করে টিসিবি কর্তৃপক্ষে বরাবরে প্রেরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আঞ্চলিক অফিস থেকে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
টিসিবি সিলেট আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় টিসিবি’র পণ্য বিক্রির জন্য ২৫৫ জন ডিলার রয়েছেন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৯৬ জন, সুনামগঞ্জে ৮৪ জন, মৌলভীবাজারে ৩০ জন ও হবিগঞ্জে ৪৫ জন ডিলার রয়েছেন। রোববার (১২ মার্চ) পর্যন্ত বিভাগের ২৫-৩০ জন ডিলার পণ্য বুঝে নিতে সক্ষম হয়েছেন। যা মোট ডিলারের ৭৫ ভাগের কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে সুলভ মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য পেতে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫২১টি পরিবারকে দেয়া হয়েছে ফ্যামিলি কার্ড। এরমধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৫ হাজার, সিলেট জেলার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৬৩টি, সুনামগঞ্জ জেলার ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৯১২টি, মৌলভীবাজার জেলার ৭২ হাজার ৪২৬টি ও হবিগঞ্জ জেলার ৯১ হাজার ৮২০টি পরিবার রয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতির এই কঠিন সময়ে টিসিবি’র মাধ্যমে সূলভমূল্যে পণবিক্রি সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। ফ্যামিলি কার্ড দিতে জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও এরমাধ্যমে দেশের ১ কোটি পরিবার কমদামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। বছরের বেশীর ভাগ সময়ই বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন মওসুমকে সামনে রেখে টিসিবির পণ্যবিক্রি শুরু করে সরকার। এবারও পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে সিলেটসহ সারাদেশে টিসিবির দুই ধাপে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১ম ধাপের পণ্য বিক্রির জন্য ৯মার্চ তারিখ ধার্য্য করলেও ৪ দিনে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানেই শুরু হয়নি পণ্য বিক্রি। রোববার পর্যন্ত একমাত্র হবিগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলায় আংশিক স্থানে পণ্য বিক্রি শুরুর খবর পাওয়া গেছে।
টিসিবির সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মো: ইসমাইল মজুমদার রোববার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে জানান, আমরা পণ্য দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু ডিলারগণ যথাসময়ে ডিও পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় পণ্য দিতে বিলম্ব হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভাগের ২৫-৩০ জন ডিলার পণ্য বুঝে নিয়েছেন। তারা বিক্রিও শুরু করেছেন। বিভাগের ২৫৫ জন ডিলার রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও’র ডিও লেটারের কপি হাতে পেলেই আমরা সংশ্লিষ্ট ডিলারদের পণ্য বুঝে দিতে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত আছি। আজ রোববার কিছু ডিও পেয়েছি, পণ্যও পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যেই সব ডিলার পণ্য বুঝে পাবেন।
এদিকে আমাদের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন জানান, সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ জেলার কোন উপজেলা ও পৌর এলাকায় টিসিবির রমজানের পণ্য বিক্রয় শুরু হয়নি। সিলেট বিভাগের কেবল হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় বৃহ¯পতিবার কার্ডধারীরা পণ্য কিনতে পেরেছেন। ওখানকার টিসিবি ডিলাররা পণ্য তুলে বৃহ¯পতিবার বিক্রয় করেছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভার তিনজন ডিলার অর্থ জমা দিলেও বৃহ¯পতিবার ডিও না পাওয়ায় তাদের পণ্য ওঠানো হয়নি। জেলার ১২ উপজেলার নিম্নআয়ের ১ লাখ ১৪ হাজার ৯১০ জনের টিসিবি কার্ড আছে। এই কার্ডধারীরা রমজান মাসে দুইবার টিসিবি’র পণ্য কিনতে পারবেন। একজন কার্ডধারী প্রতিবার এক কেজি চিনি ৬০ টাকা, এক কেজি ছোলা ৫০ টাকা, দুই কেজি মসুরি ডাল ১৪০ টাকা এবং দুই লিটার সোয়াবিন ২২০ টাকায় পাবেন। বৃহ¯পতিবার থেকেই টিসিবির এই পণ্য সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় বিতরণ হবার কথা ছিল।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিনজন ডিলার অর্থ জমা দিয়েও ওইদিন ডিও পান নি। দিরাই, ছাতক ও জগন্নাথপুর পৌরসভা এলাকার কোন ডিলারও পণ্য তুলেননি।
জেলা প্রশাসকের বাজার শাখার কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বললেন, গত রোববারই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে রমজানের টিসিবি পণ্যের জন্য ডিলারদের ডিও দেবার জন্য অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়। ওইদিন টিসিবির সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে চিনি ছিল না, এটিও জানানো হয়। কিন্তু মঙ্গলবার আবার সংশোধিত চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, চিনি এসেছে, চিনিসহ যেন ডিও দেওয়া হয়। গত বৃহ¯পতিবার হবিগঞ্জের পৌর এলাকার ডিলারগণ রমজানের পণ্য তুলে শহরে বিক্রয় করেন। দেশের অন্যান্য অনেক অঞ্চলেও পণ্য তুলে বিক্রয় হয়। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ৯ জন ডিলারের মধ্যে তিনজন ডিলার পণ্য তোলার অর্থ জমা দিয়ে ডিও নেবার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলেও ওইদিন তারা ডিও পান নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম বললেন, টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে ৯ মার্চের পরে ডিও দেবার জন্য। এজন্য ওই দিন অর্থাৎ ৯ মার্চ বৃহ¯পতিবার ডিও দেওয়া হয় নি।