জগন্নাথপুরে হাজার মিটার ফাঁকা রেখে বাঁধের কাজ শেষ, শঙ্কিত কৃষক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০২৩, ৯:২৪:৩২ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরে দুইটি স্থানে প্রায় এক হাজার মিটার জায়গা ফাঁকা রেখে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে আরো ২টি প্রকল্প দিয়ে কাজ করা প্রয়োজন ছিল। নো ওয়ার্ক দেখিয়ে প্রকল্প না দেয়ায় ফাঁকা রয়েছে। এসব ফাঁকা স্থান দিয়ে পানি ঢুকে হাওর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ দুই ক্লোজারে বাঁশ-বস্তার কাজ শুরু না হওয়ায় ও গোড়া থেকে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণসহ নানা ত্রুটি রয়ে গেছে। যা হওয়ার কথা ছিল না। ইতোমধ্যে সরকারি বেঁধে দেয়া সময় ও বর্ধিত সময় শেষ হয়ে গেছে গত ৬ দিন আগে।
সোমবার জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের ৬ থেকে ৩২নং প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে নানা ত্রুটি দেখা যায়। ১২ থেকে ১৩নং প্রকল্পের মধ্যস্থান প্রায় ৫০০ মিটার ও ১৬নং প্রকল্পের মধ্যস্থান আরো প্রায় ৫০০ মিটার জায়গা ফাঁকা রেখে হাওরের পুরো কাজ শেষ করা হয়েছে। এ সময় হাওরে থাকা কৃষক ও গরু রাখালরা জানান, এসব স্থানে বাঁধ না হলে হাওর রক্ষা হবে না। গচ্চা যাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা ও ফসল হারাবে কৃষক। তাই দ্রুত এসব ফাঁকা স্থানে বাঁধ নির্মাণ করতে তারা কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।
এছাড়া ৭নং প্রকল্পের ঝুঁকিপূর্ণ সেই ক্লোজারে জিও টেক্স বসানো হচ্ছে। জিও টেক্স এক ধরণের কার্পেট। মাটি ও পানি সংস্পর্শে শক্ত হয়ে যায়। এ সময় ৭নং প্রকল্পের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আহমদ আলী জানান, আজ বসানো হচ্ছে জিও টেক্স। কাল থেকে জিও টেক্সের উপরে মাটির বস্তা বসানো হবে। নিচে দেয়া হবে বাঁশের আড়। স্থানীয়রা জানান, গত বছর এ স্থান দিয়ে ফাটল দেখা দিলে হাওরের পাকা-আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রশাসন, পিআইসি ও স্থানীয় কৃষক-জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে দিনরাত অতিরিক্ত কাজ করে বাঁধ রক্ষা করায় হাওরের বোরো ফসল কৃষকদের গোলায় উঠেছিল। যে কারণে এবার এ প্রকল্পের ক্লোজারের দিকে সবার নজর আছে। তবে গত বছর এ বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও পরে ২/১জন ব্যক্তি রোজের শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়েছেন দাবি করে টাকা নিয়েছেন বলে পিআইসিরা জানান।
এদিকে-১০নং প্রকল্পের শালিকার ডহর ক্লোজার ও ১৬নং প্রকল্পের ঝুঁকিপূর্ণ গাদিয়ালা ক্লোজারে এখনো বাঁশের আড় ও বস্তা বসানোর কাজ শুরু হয়নি। যদিও ১০ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য সুজাত মিয়া ও ১৬নং প্রকল্পের সভাপতি আবুল কাশেম জানান, কাল থেকে ক্লোজারে আড়-বস্তার কাজ শুরু হবে। তাছাড়া ৩২নং প্রকল্পে বাঁধের গোড়া থেকে গভীর খাদ করে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় নারিকেলতলা হাওরের কৃষকরা দুশ্চিন্তায় ভোগছেন। এ প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওছার মিয়া তালুকদার জানান, আমার বাঁধে ম্যাজিস্ট্রেট পরিদর্শনে এসে এমনিতেই অতিরিক্ত কাজ করিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো’র জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মুহাম্মদ হাসান গাজী বাঁধের ফাঁকা থাকা অংশ বিষয়ে বলেন, নো ওয়ার্ক থাকায় ওই দুই স্থান প্রকল্পের আওতায় আসেনি। তবুও সৌন্দর্য্যবর্ধণের জন্য কাজ করা হবে। ১২ থেকে ১৩নং প্রকল্পের বাকি অংশে ১৩নং প্রকল্পের সভাপতি সাব্বির আহমদ ও ১৬নং প্রকল্পের বাকি অংশে বাঁধ নির্মাণের জন্য জুয়েল মেম্বারকে বলে দিয়েছি। তিনি ক্লোজার নিয়ে বলেন, বাঁধের ক্লোজারগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের জোর তাগিদ দেয়া হচ্ছে। ৩২নং প্রকল্পে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাস্তি হিসেবে ওই পিআইসির বিল কর্তন করা হবে। তবে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো.সাজেদুল ইসলাম বলেন, আজ ৬ থেকে ১৮নং প্রকল্প পরিদর্শন করেছি। গত বছর থেকে এবার বাঁধে ভালো কাজ হয়েছে। আল্লাহর রহমতে হাওর এখন বিপদমুক্ত আছে।