তুচ্ছ হলেও গুরুতর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৫:২৪ অপরাহ্ন
গতকাল জাতীয় ইংরেজী মিডিয়া ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এ ‘সেইল অব ফুড রেপড্ ইন এবানডোন্ড নিউজ পেপার কনটিনিউজ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু জনস্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশব্যাপী পরিত্যক্ত পত্রপত্রিকা খাদ্যসামগ্রী মোড়ার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ, কনফেকশনারী, স্ন্যাক্স ও ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলো পেটিস, পেস্ট্রি, সমুচা, সিঙ্গাড়া এমনকি বার্গার, স্যান্ডুচসহ বিভিন্ন ধরনের তৈরী খাবার পুরোনো নিউজ পেপারে মুড়ে বিক্রি করছে। এছাড়া পান সুপারীসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীও একইভাবে ব্যবহৃত সংবাদপত্র মুড়ে বিক্রি করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিভিন্ন স্কুলের বাইরে ভ্যানওয়ালারা চানাচুর কাটাফল ও আচারসহ যেসব খাদ্য সামগ্রী শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে, সেগুলোর অধিকাংশই সংবাদপত্র কিংবা লেখা কাগজে মুড়ে বিক্রি করতে দেখা যায়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফুড সেইফটি অথোরিটি (বিএফএসএ) তৈলাক্ত ও গরম খাদ্যদ্রব্য মুদ্রিত কাগজে বিশেষভাবে নিউজ পেপারে মুড়ে বিক্রয় না করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহও বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে। গত শুক্রবার ফুড সেইফটি অথোরিটি অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ মুদ্রিত কাগজে খাদ্য সামগ্রী বিক্রয়ের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে বলা হয় যে, ফুড সেইফটি অ্যাক্ট-২০২৩ অনুসারে মুদ্রিত কাগজে মুড়ে খাদ্যসামগ্রী বিক্রয় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তারা খাদ্যদ্রব্য নিরাপদ পাত্রে বা মোড়কে বিক্রির পরামর্শও প্রদান করেন। বিএফএসএ’র নোটিশে আরো বলা হয়, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলো ঝালমুড়ি, ফুচকা, সমুচা, রোল, সিংগাড়া, পেঁয়াজু, জিলাপী এবং পরোটা পুরোনো পত্রিকা এবং অন্যান্য কাজে কাগজে মুড়ে বিক্রি করছে। এতে বলা হয়, সংবাদপত্রে বিপজ্জনক রং ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের কাগজে মোড়া খাবার খেলে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে রক্ততে মিশে গিয়ে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনীর রোগসহ নানা ধরনের মারাত্মক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের ক্ষতিকর পদার্থের ব্যাপক ব্যবহার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কুষ্টিয়া শহরের জনৈক ঝালমুড়ি বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তার এক কেজি পুরোনো পত্রিকা লাগে। এভাবে গড়ে মাসে ৩০ কেজি পত্রিকা তিনি ব্যবহার করেন ঝালমুড়ি বিক্রয়ে। বলা বাহুল্য, অনেকে হাত মোছার কাজেও টিস্যু পেপারের পরিবর্তে মুদ্রিত পেপার ব্যবহার করেন। এতেও রাসায়নিক পদার্থ দেহের অভ্যন্তরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সচেতন মহল মনে করেন, মুদ্রিত কাগজে বিশেষভাবে পুরোনো খবরের কাগজে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি প্রতিরোধে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো দরকার। তবে কথা হচ্ছে যে, যখন এদেশের প্রায় সকল খাদ্য সামগ্রীতে কমবেশী ভেজাল বিদ্যমান এবং এটা প্রতিরোধে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে মুদ্রিত কাগজে খাবার বিক্রয়ের বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টরা তুচ্ছ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
দেখা গেছে, পলিথিনে বিশেষভাবে কালো পলিথিনে খাদ্য সামগ্রী মুড়ে রাখলে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা এমন সতর্কবাণী প্রচারের পরেও দেশব্যাপী পলিথিনে মুড়ে খাবার বিক্রিতে ভাটা পড়েনি। কিছু কিছু রেস্তোরাঁ ও খাদ্যসামগ্রীর দোকান নিজেদের তৈরী বক্স বা প্যাকেটে খাবার বিক্রি করলেও পলিথিন ব্যবহার থেকে বিরত হয়নি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এর ফলে দেশজুড়ে পলিথিন সামগ্রীর রমরমা ব্যবসা চলছে এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য সৃষ্টি করছে হুমকি। এ ব্যাপারে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশসমূহের মতো কঠোর আইন ও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা উচিত। এর পাশাপাশি র্যাপার বা মোড়ক হিসেবে পরিবেশ বান্ধব কাগজ বা কাপড় বা অন্য বিকল্প সামগ্রীর উৎপাদন ও ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে দেশব্যাপী। অন্যথায় মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না, এমন অভিমত সচেতন মহলের।