মাতৃগর্ভেই শিশুর সফল হার্ট সার্জারি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৩, ৮:৪৬:১৮ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জন্মের আগেই শিশুর হার্টে ক্ষত ধরা পড়েছিল। শিশুটি তখনও মাতৃগর্ভে। ২৮ বছর বয়সি এই গর্ভবতী মাকে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, শিশুটির হার্টে একটি ক্ষত আছে। ছোট্ট হার্টে এমনভাবে ব্লক তৈরি হয়েছে যে রক্ত ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। শিশুটি জন্মানোর পর তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না, তাই গর্ভপাত করাই শ্রেয়। কিন্তু এতে রাজি হননি ওই মা। তাই গর্ভেই শিশুর হার্টে সার্জারি করলেন চিকিৎসকরা। বিরল এবং জটিল সার্জারিটি করেছেন দিল্লির এইমসের চিকিৎসকরা। এইমসের কার্ডিওথোরাসিক সায়েন্স সেন্টারে এই সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও ফেটাল মেডিসিন স্পেশালিস্টের টিম এই সার্জারি সফলভাবে করতে সক্ষম হন।
চিকিৎসকরা বলেছেন, গর্ভস্থ শিশুর হার্টে কেনো সমস্যা আছে কিনা তা জানা যায় ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করে। জন্মের আগেই ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করানো হয়। এক্ষেত্রে আগে থেকে বোঝা যাবে যে, গর্ভস্থ বাচ্চার হার্টে কি কি সমস্যা রয়েছে। যদি দেখা যায়, গর্ভস্থ শিশুটি হার্টে বড় কোনো সমস্যা নিয়ে জন্মাচ্ছে, তাহলে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেই ভ্রুণটি নষ্ট করে দেওয়া হয়। তা না হলে গর্ভেই অস্ত্রোপচার করতে হয়। এই অপারেশন খুবই জটিল। অপরিণত হার্টে সার্জারি করতে গিয়ে সামান্য খুঁত হলে গর্ভেই মৃত্যু হতে পারে শিশুর।
ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে চিকিৎসকরা দেখেন যে শিশুর হার্টে ব্লক রয়েছে। দেখা যায় যে, বাচ্চাটির হার্টের ডান দিকের ভালভ ও চেম্বারগুলো ঠিক মতো এখনো তৈরি হয়নি। এই চেম্বারগুলো হল ট্রাইকাসপিড অ্যাট্রেসিয়া, হাইপোপ্লাস্টিক রাইট ভেন্ট্রিকল এবং পালমোনারি অ্যাট্রেসিয়া। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বাচ্চার হার্টে রক্ত সঞ্চালন হবে না, ফলে ফুসফুসে রক্ত পৌঁছতেই পারবে না। শিশুর শ্বাসকষ্ট শুরু হবে এবং মৃত্যুও হবে।
গর্ভাবস্থায় সব ভ্রুণের হার্টে একটি ধমনী থাকে যাকে বলে ডাক্টাস আর্টেরিওসাস। জন্মের পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই শিশুটির ক্ষেত্রে হার্টে যে ক্ষত ছিল তা মেরামতির জন্য যে ধরনের অস্ত্রোপচার দরকার তা করতে গেলে প্রাণের ঝুঁকি থাকত। তাই সার্জারি করে এই ধমনীটা সচল রাখার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা
মায়ের পেট দিয়ে সূঁচ ঢুকিয়ে তা নিয়ে যাওয়া হয় গর্ভস্থ শিশুর হার্টে। এরপর বেলুন ক্যাথেটার দিয়ে ব্লক খুলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করেন চিকিৎসকরা। আর এটাই বোধহয় এত ছোট শিশুর ক্ষেত্রে এই প্রথম বার সার্জারি করা হল। এরপর ধীরে ধীরে চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করে শিশুটি। সার্জারির পরে মা ও শিশু এখন সুস্থ আছে বলে জানা গেছে।
সূত্র: এনডিটিভি