ভারতে পেঁয়াজের দামে কৃষকদের চোখে পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৩, ৭:০৮:২০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক:
পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। সম্প্রতি রাজ্যের নাসিক জেলা থেকে রাজধানী মুম্বাই পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচীর ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। নাসিক থেকে মুম্বাইয়ের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল)।
বিবিসির মহারাষ্ট্র শাখা বিবিসি মারাঠির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারি ভাবে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ও নতুন দাম ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন রাজ্যের কৃষকরা। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কিছু পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রদানের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নাসিক জেলার বাসিন্দা নামদেব ঠাকরে বিবিসিকে জানান, গত নিজেদের বিস্তৃত পারিবারিক খামারের বিপুল পরিমান জমিতে পেঁয়াজের ক্ষেত করেছিলেন তিনি। কিন্তু মৌসুম চলে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সেসব পেঁয়াজ তুলতে পারেননি তিনি। ফলে মণের পর মণ পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতেই।
কী কারণে তুলতে পারেননি- বিবিসির এ প্রশ্নের উত্তরে নামদেব বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের যে দাম, তাতে মজুর নিয়োগ করে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বাজারে বয়ে আনতে যে ব্যয় হবে তা ই উঠবে না। চাষের খরচ বাদই দিলাম।’
পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের এক নম্বর দেশ চীন, তারপরেই ভারত। প্রতি বছর ২ কোটি ৪০ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয় দেশটিতে এবং মহারাষ্ট্র ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার নামে পরিচিত। দেশটির মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের অর্ধেকই আসে পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি থেকে।
কৃষিজাত এই ফসলটির চাহিদাও ভারতে প্রচুর। সবজি এবং মসলা উভয় হিসেবেই এটি অপরিহার্য দেশটির প্রায় সব রাজ্যে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর মোট উৎপাদনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি করে ভারত। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্যতীত অধিকাংশ ভারতীয় ডিশে পেঁয়াজ অপরিহার্য হলেও দেশটির পেঁয়াজের বাজার খুবই অস্থিতিশীল। কারণ, স্বাভাবিক তাপমত্রায় এই সবজি বা মসলাটি দ্রুত পচে যায় এবং হিমাগারে নিজেদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুবিধা দেশটির অধিকাংশ কৃষকের নেই।
ভারতের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এক সময় মহারাষ্ট্রে অনেকটা একচেটিয়াভাবে পেঁয়াজের চাষ হতো। কিন্তু বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থানসহ আরও কিছু রাজ্যে পেঁয়াজ চাষ বাড়ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ আসছে প্রচুর, দামও হ্রাস পেয়েছে।
মহারাষ্ট্রের কৃষকনেতা অজিত নাভাল বিবিসি মারাঠিকে জানান, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি একশ কেজি পেঁয়াজ কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ৪০০ রুপিতে। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র ২৫৪ থেকে ৫০৮ টাকায়। যদি প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ১২০০ রুপি হতো, তাহলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ মেটানোর পর ৪০০ রুপি মুনাফা করতে পারতেন।