শুল্ক কমনোর পরও চিনির দাম বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৭:৫২:৫৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : এখনো অস্থিতিশীল দেশের চিনির বাজার। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামেই চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এমনকি ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে যে শুল্ক প্রত্যাহার হয়, তারও কোনো সুফল মিলছে না। ওই সময় আমদানি করা অপরিশোধিত চিনির ওপর থেকে কেজিপ্রতি ৭ টাকা এবং পরিশোধিত চিনি থেকে ১০ টাকা শুল্ক প্রত্যাহার হয়। তারপরও বেশি দামে চিনি বিক্রি হতে দেখা যায়। মিষ্টি চিনি দামের কারণে ক্রেতাদের কাছে এখনো তিতাই রয়ে গেছে।
বাজারের পণ্যমূল্যের হিসাব সংরক্ষণ করা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। ২০২২ সালে এই সময় দেশে প্রতি কেজি চিনি ৭৮ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। অথচ এই প্রতিবেদন লেখার সময় সিলেটের বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে ১২০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি ১৪০ টাকায়। যদিও সরকার নির্ধারিত দরে প্রতিকেজি খোলা চিনি ১০৭ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
এদিকে সামনে রমজান মাস। এসময় দেশে চিনির চাহিদা বেড়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, রোজার মাসে চিনির চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টন। আর এই সুযোগটা লুফে নেন দেশের ব্যবসায়ীরা। ফলে এখন রমজানকে কেন্দ্র করে অধিক মুনাফা প্রত্যাশী ব্যবসায়ীরা চিনির বাজারে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন। শুরুতে দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শিথিল হয়ে যায়। ফলে আসন্ন রমজানে স্বাভাবিক দরে চিনি খাওয়া যাবে না এমন শঙ্কা রয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
এদিকে চিনির বাজারে অস্থিরতার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন ব্যবসায়ীরা। মিল মালিকরা বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। আর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেট থেকেই তাদের বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে।
এরমধ্যে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে দেশে ডলার ও জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। এ কারণে গত বছরের (২০২২) জুলাই থেকে অস্থিরতা দেখা দেয় চিনির বাজারে। এ অবস্থায় একই বছরে সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেধে দেয়। এরপর তিন দফা দাম বাড়ায় সরকার। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমায় এনবিআর। এছাড়া প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর তিন হাজার টাকা ও পরিশোধিত চিনিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে সংস্থাটি। যার প্রভাব পড়ার কথা খালাস করা চিনিতে। অর্থাৎ দাম কমার কথা।
চিনির দামের বিষয়ে খোঁজ নিতে নগরীর কয়েকটি বাজারে গেলে দেখা যায়, সেখানে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি ব্র্যান্ড ভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং দেশি মিলগুলোর আখের চিনি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফলে গত একমাসের ব্যবধানে কমেনি চিনির দাম।
দেশে মূলত সিটি গ্রুপ তীর ব্র্যান্ডে, মেঘনা গ্রুপ ফ্রেশ ব্র্যান্ডে, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ইগলু ব্র্যান্ডে বাজারজাত করে চিনি। এছাড়া টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ চিনির ব্যবসা করে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের বেধে দেওয়া দামে তারা পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনতে পারছেন না। আর পাইকারি বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, তারাও নির্ধারিত দামে মিলগেট থেকে চিনি কিনতে পারছেন না।
এ বিষয়ে পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, ভ্যাট কমানোর পর মিল থেকে চিনির দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এখন সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ডিলারদের কাছে ১০২ টাকা দরে চিনি দেওয়ার কথা মিলগুলোর। তারা ডিওতে সেই দাম লিখছে, কিন্তু আন্ডার ইনভয়েস ১০৫-১১০ টাকা পর্যন্ত দাম নিচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। রোজায় এ চাহিদা আরও বেড়ে যায়। অথচ দেশে সব মিলিয়ে উৎপাদিত হয় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। শুধু রোজার মাসে চিনির চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় আড়াই থেকে তিন লাখ টন। দেশে উৎপাদন না থাকায় চাহিদার বড় অংশই জোগান দেওয়া হয় আমদানির মাধ্যমে।