বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিল্প বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৯:১০:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশে এখনো অনেক শ্রমিক তাদের অধিকার পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের শ্রম ও নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সংস্কারে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এজন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও ভবিষ্যতের শিল্প বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ বাংলাদেশে এখনো অনেক শ্রমিক তাদের অধিকার পাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) আয়োজিত সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে টেকসই তৈরি পোশাকশিল্প গড়ার লক্ষ্যে চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে সার্কুলারিটি, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬০ জনের বেশি বক্তা বক্তব্য দেন। আর টেকসই পোশাক পণ্য প্রদর্শন করে ২০টি প্রতিষ্ঠান। অ্যাপারেল ফোরামের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রধান গন্তব্য হতে পেরে মার্কিনীরা গর্বিত। এর মাধ্যমে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই। আমরা সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই। টেকসই উন্নয়নে শ্রমিকের ভূমিকা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই।
তিনি বলেন, আগামী মাসে মর্মান্তিক রানা প্লাজা কারখানা ধসের ১০ বছর পূর্তি হবে। রানা প্লাজা ধসের পর থেকে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও, আমরা ভবিষ্যতের শিল্প বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা উদ্বিগ্ন যে, সারা বাংলাদেশে অনেক শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সম্মিলিতভাবে দর কষাকষির অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।
তিনি বলেন, শ্রমিক অধিকারে ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এটা ভালো। পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা, বেতন ও শিশু অধিকার ভালো হচ্ছে, এটা ভেবে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাদেরকে শিল্পের সহযোগী ভাবার সময় এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন শ্রমিকরা। এসবের সমাধান যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়, তবে কাজের গতি বেশ ধীর। তবে আমরা উদ্বিগ্ন যে এখনো অনেক শ্রমিক তাদের অধিকার পাচ্ছে না। আমরা মনে করি, টেকসই উন্নয়নের শর্ত সবার অধিকার নিশ্চিত করা।
শ্রমিকের নিরাপত্তা পণ্যের ন্যায্য দাম পেতেও সাহায্য করবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকারকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস সেক্টর এবং এর বাইরে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অবশ্যই শক্তিশালী শ্রম অধিকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যোগদানের অধিকার এবং ভালো কাজের অবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে দর কষাকষি করা।
এদিকে পোশাক শিল্পকে টেকসই করার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পোশাক শিল্পকে একা এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সবাইকে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করতে হবে। সেজন্য দরকারি সব সহায়তা সরকার দেবে।
তিনি বলেন, পোশাক খাতকে দুটি বিষয় সাসটেইনেবলিটি গতিশীল করতে পারে। প্রথম সরকারি নীতি। এটাতে আমরা প্রস্তুত। দ্বিতীয়ত, সবার সহযোগিতা। আমি সবাইকে পোশাক খাতে টেকসই করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
বিএইর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের কাছে এখন বড় আলোচনার বিষয় হচ্ছে, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায়। তারা বছরের পর বছর ধরে পোশাকের খুচরা বিক্রয় কার্যক্রমে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ সরবরাহ ব্যবস্থায় হয়ে থাকে।