‘ভেরি ডেঞ্জারাস’ আয়ারল্যান্ড চ্যালেঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০২৩, ৩:৪৫:৪৮ অপরাহ্ন
আহবাব মোস্তফা খানঃ মধুর বসন্তে সিলেটে চলছে কালবৈশাখীর চোখ রাঙানী। দিনভর আকাশ মেঘলা। আবার কখনো মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেয় সূর্য। ভোর রাতে ঝড় এসে আবার আলো ফোটার আগেই নেয় বিদায়। মেঘ-রোদ ও আলো-আধারীর খেলার মাঝেই সিলেটে আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন। এমন প্রত্যাবর্তনের দিনে বাংলাদেশের সামনে আয়ারল্যান্ড চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু আইরিশ চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ দলে কালবোশেখীর মতোই যেন ঝড় বয়ে গেলো কাল পর্যন্ত। অধিনায়ক তামিমের জ্বর, সিলেটের লোকাল বয় জাকির ও অল রাউন্ডার মিরাজের ইনজুরী, প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে আইরিশদের দারুণ জয় এবং সাকিবের বিতর্কিত ও সমালোচিত দুবাই সফর। বহুমাত্রিক ‘ঝড়ের’ কবলে পড়ে বাংলাদেশ দলে অনেকটা টালামাটাল অবস্থা।
এমন অবস্থায় আরো ভয় জাগানিয়া কথা শুনালেন বাংলাদেশ দলের কোচ হাথুরুসিংহে। শুক্রবার সিলেটে প্রেস ব্রিফিংয়ে তার কাছে প্রশ্ন ছিলো আয়ারল্যান্ড কেমন প্রতিপক্ষ? তিনি কোন ভূমিকা ছাড়াই বললেন, ‘ভেরি ডেঞ্জারাস’। আমরা আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলকেও ইংল্যান্ডের মতো করেই সমীহ করছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনার মতো করে চিন্তা করলে আমার ক্যারিয়ারের জন্য কতটা ভুল হবে। আমরা আয়ারল্যান্ডকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছি না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি তাদের বিপক্ষেও আমাদের মানসিকতা একই। আমরা তাদের সম্মান করছি। সঙ্গে এটাও বলতে চাই আমরা কোনও দলকে ভয় পাই না। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহজ প্রতিপক্ষ বলতে কিছু নেই।
ওদিকে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বড় শক্তি স্পিন উইকেট। কন্ডিশনের সুযোগ বলতে এটাই বেশি কাজে লাগায় বাংলাদেশ। যে কোনো দলই বাংলাদেশ সফরে আসলে স্পিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। সেই পর্যবেক্ষণ থেকে আয়ারল্যান্ড জানিয়েছে, স্বাগতিক দলের বিপক্ষে স্পিন পরীক্ষা দিতে তারা প্রস্তুত। নিজেদের ছন্দ ধরে রেখে ভালো করতে মুখিয়ে আছে সফরকারীরা।
শুক্রবার ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটাই জানালেন আইরিশ অলরাউন্ডার হ্যারি টেক্টর। হ্যারি টেক্টর বলেছেন, দেখুন ইংল্যান্ড-বাংলাদেশের শেষ সিরিজে আন্তর্জাতিক পার স্কোরের চেয়ে একটু কম রান হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় সিলেটে গড়ে ৩০০ রানের বেশি হয়। কাজেই প্রত্যাশা করা যায় ব্যাটিং উইকেট হবে। ভালো ক্রিকেটিং উইকেট। হয়ত কিছুটা স্পিনও করবে, যেমনটা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে। স্পিন হতেই পারে, আবার নাও হতে পারে। কঠিন উইকেট হতে পারে আবার ভালো উইকেট হতে পারে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে।
আইরিশ এই অল রাউন্ডারের আত্মবিশ্বাস বেশী হলেও যদিও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ানডে দ্বৈরথে যোজন যোজন এগিয়ে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ম্যাচের ৭টি জিতেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের এই সংস্করণে বাংলাদেশ যে সমীহ জাগানো দল সেটা খুব ভালো করেই জানেন পল স্টার্লিংরা।
এত এগিয়ে থেকেও এই সিরিজে বাংলাদেশকে নিয়ে দুশ্চিন্তারও কোন অন্ত নেই। বড় দুশ্চিন্তা অধিনায়ক তামিমকে নিয়ে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন, তামিমের ভাইরাল জ্বর হয়েছে। হাথুরুর মতে, তামিমের ফিটনেস নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ আছে। জ্বরের কারণে দুর্বল হয়ে গেছেন তিনি। সব মিলিয়ে দলের চিকিৎসক এবং তামিম সবুজ সংকেত দিলেই আইরিশদের বিপক্ষে আজ দেখা যাবে তাকে।
গা গরমের অনুশীলনে চোটে পড়েছেন ডানহাতি স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি মিরাজ। অনুশীলনের সময় হাসান মাহমুদের নেওয়া শট মিরাজের চোখে এসে লাগে। মিরাজকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক জানিয়েছেন, সিটি স্ক্যান করে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। চোখের চিকিৎসা দেখে কোন সমস্যা না পেলেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষ খেলার জন্য ছাড়পত্র পাবেন তিনি। এর আগে ইনজুরীর কারণে ছিটকে গেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, উইকেটরক্ষক ও সিলেটের লোকাল বয় জাকির হাসান। নিজের চিরচেনা শহরে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবার ডাক পেয়েও খেলতে পারছেননা জাকির। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে কেবল দীর্ঘশ্বাসই ফেললেন তিনি।
এতসব দুশ্চিন্তার মাছে সিলেটে আসা সাকিবকে দেখে মনে হলোনা সতীর্থদের ইনজুরী কিংবা তার বিতর্কিত দুবাই সফরকেন্দ্রীক ‘ঝড়ের’ কোন প্রভাব পড়েছে। বরং তাকে দেখা গেলো আরো উজ্জিবিত, কনফিডেন্ট। এমনিতেই সাকিবকে নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে বেশী। দুবাই সফর শেষে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় সাকিবকে নিয়ে আগ্রহটা ছিল আরও বেশি। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলনের শেষ পর্যন্ত সাকিবের প্রতিটি মুভমেন্টে ছিল সবার চোখ।
গা গরমের অনুশীলনে বরাবরই দলের সবচেয়ে উৎসাহীদের একজন সাকিব আল হাসান। কালও ব্যতিক্রম নয়। সিলেটের মেঘে ঢাকা সকালে সবার আগে তাকেই দেখা গেল ফুটবল নিয়ে দৌড়াতে। অনুশীলনের ফুটবল ম্যাচেও দাপিয়ে বেড়ালেন। পরে এক পাশের সেন্টার উইকেটে ফ্রি হ্যান্ডে বিগ শট করলেন কিছুক্ষণ। নেটে শুরুর দিকে বোলিং করলেও ব্যাটিংয়ে গেলেন অনুশীলনের একদম শেষ দিকে।
সাকিব বরাবরই প্রত্যয়ী। নানামুখী বিতর্ক জন্ম দিয়েও ম্যাচ রাঙাতে তার জুড়ি নেই। আজও কি সিলেটের নয়নাভিরাম মাঠ রাঙাবেন ব্যাটে-বলে সেদিকেই তাকিয়ে সংশ্লিস্টরা। কারণ সাকিবের ব্যাট হাসলেই বাংলাদেশ হাসে!