শান্তিগঞ্জে বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর আঞ্চলিক মহাসড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৩, ৫:৫২:৩৫ অপরাহ্ন
শান্তিগঞ্জ সংবাদদাতা: গত দু’দিন আগেও শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের চোখেমুখে ছিলো দু:শ্চিতার ভাঁজ। বৃষ্টি না হওয়ায় লালচে রঙ ধরতে শুরু করেছিলো হাওরে রোপনকৃত ধানের চারায়। জমি ফেটে চৌচির হচ্ছিলো বলে চিন্তার শেষ ছিলো না উপজেলার ৮ ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের। গত সপ্তাহ থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হলেও শান্তিগঞ্জে বৃষ্টি হচ্ছে শুক্রবার রাত থেকে। তাও রিমঝিম বৃৃষ্টি। তবু এ বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে কৃষকের মাঝে।
এদিকে, বেপরোয়া মাটির ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ায় বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, বিভিন্ন ইউনিয়নের আভ্যন্তরিন সড়কসহ উপজেলার একাধিক জায়গা। এতে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে একাধিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ।
উপজেলার দেখারহাওর, তেছারকোনা, নাগডরা, ডুকলাখাই, পাখিমারার হাওর, জামখলার হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওরের একাধিক কৃষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, আপাতত আমাদের দুঃশ্চিন্তা কেটেছে। এই মুহুর্তে বৃষ্টির খুবই দরকার ছিলো। আরও আগে হলে ভালো হতো। তবু আমরা খুশি। ধানে নতুন শীষ বেরোচ্ছে। বৃষ্টি পাওয়ায় এখন দ্রুত বেরিয়ে যাবে। এই বৃষ্টিতে কৃষক ও কৃষির অনেক উপকার হবে। শুধু ধান নয়, সব রকমের উৎপাদিত শস্যের খুব উপকার হবে এ বৃষ্টিতে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির দিনেও এই সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিলো লক্ষণীয়। কারণ পণাতীর্থে গঙ্গাস্নান করতে ও শাহ আরেফিনের মাজারের বার্ষিক ওরসে অংশ নিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও ভক্তবৃন্দ এ পথেই তাহিরপুরে যাচ্ছেন। রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী মাটির ট্রাক্টর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তা মারাত্মক পিচ্ছিল করে রেখেছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের মাহমুদপুর থেকে ছাতকের বড়কাপন পয়েন্ট পর্যন্ত জায়গাজুড়ে রাস্তা মাটির কাদায় পিচ্ছিল হয়ে আছে। পিঠাপশী রাস্তার পয়েন্ট থেকে জাউয়া বাজার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তায় মাটি পড়ে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। শান্তিগঞ্জের মৎস্য হেচারির সামনের কিছু অংশ, আহসানমারা সেতু সংলগ্ন ও দিরাই রাস্তার মুখ সংলগ্ন কিছু অংশে মাটি পড়ে রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়েছে। এতে ঘটছে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা।বাস চালক শহিদ মিয়া বলেন, মাটি পড়ে রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে, রাস্তা দিয়ে বাস চালাতে ভীষণ ভয় করে। ৩/৪টা গাড়ি আহসানমারা সেতুর কাছে এক্সিডেন্ট করেছে।
দর্শনদেউড়ী মিনিবাস শ্রমিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কবির উদ্দিন, অপর এক চালক শাহনূর মিয়া ও সিএনজি চালক শহিদ মিয়া বলেন, দু’দিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। সব জায়গায় মাটির কারণে রাস্তা পিচ্ছিল। গাড়ি এক জায়গায় ব্রেক করলে স্লিপ করে অন্য জায়গা গিয়ে থামে। গত কয়েকদিন আগে চেকনিখাড়ার সেতু সংলগ্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩জন নিহত হয়েছেন। এর কারণও মাটির ট্রাকের পড়ে যাওয়া মাটি।টিএসআই (ট্রাফিক পুলিশ) অনন্ত কুমার সরকার বলছেন, এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এজন্য মাটি কাটা হচ্ছে। তবে যারা মাটি কাটছেন তাদের সাথে আমি কথা বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব তারা যেনো রাস্তা পরিষ্কার করেন।
অবশ্য মাটির ট্রাকের কারণে একটি দুর্ঘটনার কথা ছাড়া অন্য কোনো দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করেননি জয়কলস হাইওয়ে থানার ওসি সেলিম আহমদ। তিনি বলেন, মাটিতে পিচ্ছিল হয়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ নিহত হননি। তাছাড়া, আমার লোকবল কম। মাত্র ৬/৭জন সহকর্মী আছেন। একজন এসআইও নাই। সকলকে সচেতন হতে হবে। এসব এলাকায় যেসব জনপ্রতিনিধি আছেন তাদেরকে সচেতন হতে হবে। যারা মাটির ব্যবসা করেন তাদের সাথে কথা বলে আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণে আনার।