জেলা প্রশাসককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৩, ৮:১০:২৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের জেলা প্রশাসককে তার কার্যালয়ের সামনে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান নিজ কার্যালয় ছেড়ে চলে যান। রোববার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী সিরাজ মিয়া এক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এছাড়া সেলিনা বেগম নামের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের আরেক প্রার্থীও পরাজিত হন। ফলাফল ঘোষণার পর এই দুই প্রার্থী নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ আনেন।
রোববার দুপুরে তাদের দু’জনের পক্ষে এলাকার শতাধিক বাসিন্দা নির্বাচনের ফলাফলে প্রতারণার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে তার কার্যালয়ে আসেন। এ সময় জেলা প্রশাসক প্রথমে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে চাননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কার্যালেয়র সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক গাড়িতে চড়ে কার্যালয়ের বাইরে যেতে চাইলে তার গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে জেলা প্রশাসককে মুক্ত করেন।
পরে এই দুই পরাজিত প্রার্থীকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে আজবাহার আলী শেখ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পরাজিত প্রার্থীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তারা।
সিরাজ মিয়া বলেন, ভোটে আমাদের পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। এই অভিযোগ দিতে এলাকার ভোটাররা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসেছিলো। কিন্তু জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি নিতে না চাওয়ায় তারা কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
এ ব্যাপারে এসএমপি’র উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কিছু লোক হট্টগোল করছে শুনে আমরা এখানে আসি। পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে শান্ত করলে জেলা প্রশাসকের গাড়ি স্থান ত্যাগ করে। তিনি বলেন, ওই দুই প্রার্থীকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয়। আমরা তাদের স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছি।
স্মারকলিপিতে মেম্বার প্রার্থী সিরাজ মিয়া ও সেলিনা বেগমের সমর্থকরা উল্লেখ করেন, টুকেরবাজার ইউনিয়েনর ৩নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসায় শুরু থেকেই অনিয়ম দেখা যায়। ভোটগ্রহণ সকাল ৮টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সকাল ৯টায় শুরু করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার যান্ত্রিক ক্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করতে দেরি করেন। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল শিটে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য পোলিং এজেন্টদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এজেন্টরা এভাবে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রিজাইডিং অফিসার ফুটবল মার্কার সকল পোলিং এজেন্টকে জোরপূর্বক ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১ ঘন্টা আগেই বের করে দেন।
নানা অনিয়মের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং অফিসার মৌখিকভাবে প্রথমে ফুটবল মার্কার প্রার্থীকে ৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দিলেও তার স্বাক্ষরিত ফলাফল শিটে দেখা যায়- টিউওবয়েল মার্কার প্রার্থী ১ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এটি প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রতারণামূলক এই ফলাফল শিটে অনেক প্রার্থীর এজেন্টরা স্বাক্ষর করেননি। এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ফলাফল ঘোষণা করেছেন। স্মারকলিপিতে সেই ফলাফল বাতিল করে টুকেরবাজার ইউনিয়েনের ৩নং ওয়ার্ডে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হয়।