৩ মাসেও মিলেনি মাধ্যমিকের ৩ বই
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ১:০০:৪০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নতুন শিক্ষাবছরের ৩ মাস পেরোতে চললেও এখনো সিলেটের শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছায়নি সবগুলো বই। নবম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের একটি বইও এখন পর্যন্ত সিলেট আসেনি। এতে বিপাকে পড়েছে ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বই না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।
আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে রমজান। রমজানে একমাসের বেশি সময় বন্ধ থাকবে বিদ্যালয়। ফলে রমজানের আগে বই না পৌঁছলে বছরের ৪ মাসই বইহীন থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যদিও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, রমজানের আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব পৌঁছে দেয়া হবে। এর আগেও একাধিকবার আগামী সপ্তাহে বই পৌঁছে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। এ নিয়ে জালালাবাদে একাধিকবার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
নবম শ্রেণির তিনটি বই এখনও না আসার কথা জানিয়ে নগরীর ঐতিহ্যবাহী একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, এখনও বেশিরভাগ ক্লাসেরই শতভাগ বই মিলেনি। তবে নবম শ্রেণির তিনটি বই সিলেটে এককপিও আসেনি। গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইও এখন পর্যন্ত আসেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘসময় বইহীন থাকলে এর প্রভাব তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও পড়বে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে পুরনো বইয়ের দু-এক কপি ছিল। এগুলো দিয়ে এখন শিক্ষকরা কোনোমতে ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে বই না থাকায় তাদের বাড়ির কাজ দেয়া যাচ্ছে না। তবে শহরের চাইতে গ্রামের শিক্ষার্থীরা আরও বিপাকে পড়েছে। গত সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকেও বই না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এমন অবস্থা সিলেট বিভাগের প্রায় সকল উচ্চ বিদ্যালয়ের। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা শীঘ্রই আসছে বলে জানান। কিন্তু তাদের সেই শীঘ্রই এখনো শেষ হচ্ছেনা। কবে শেষ হবে এর ঠিক নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের এক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে আশ^স্ত হয়েই বই আসার প্রতিশ্রুতি দেই। কিন্তু এনসিটিবি যথাসময়ে বই সরবরাহ করতে না পারছেনা। এখানে আমাদের কিছুই করার নাই। এনসিটিবি যদি সময় নির্ধারণ করে দিতো যে অত তারিখের মধ্যে বই আসবে তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের সেই তারিখ বলে দিতাম।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাউশি সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে স্কুল, মাদ্রাসা, ভোকেশনাল, ইংরেজি ভার্সন মিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে সিলেট জেলায় পাঠ্যবইয়ের মোট চাহিদা ছিল ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৪ কপি। এরমধ্যে পাওয়া গেছে ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৮ কপি। ফলে এখনও দুই লাখ দুই হাজার ৬০৬ কপি বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোর চাহিদা ছিল ৪০ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৮ কপি। এরমধ্যে পাওয়া গেছে ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪২ কপি।
বই না পাওয়ায় ক্লাসেও তেমন পড়ানো হয় না জানিয়ে নগরীর উপশহর শাহজালাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, বই না থাকায় গণিত, বাংলা ও ধর্ম ক্লাসে তেমন পড়ানো হয় না। কিছু কিছু পড়ালেও আমরা তা বুঝতে পারি না। বিশেষত গণিতের একটি অধ্যায়ও এখন পর্যন্ত শেষ করা যায়নি।
সাড়ে তিন মাসেও বই না আসায় নগরীর ও শহরতলীর নবম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এক বছর পর এসএসসি দেবে। তাদের বই সবার আগে আসা উচিত ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইও আসেনি। এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে। এরই মধ্যে গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও বাকী তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
একাধিক অভিভাবক বলেন, রমজানের ছুটির পরই তো পরীক্ষা শুরু হবে। বই না পেলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে কীভাবে। পুরনো বই থেকে ফটোকপি করে সন্তানদের পড়তে দিয়েছি। কিন্তু নতুন বইয়ে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা তো জানি না। ফলে এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।
জানা গেছে, এবার শুরু থেকেই বই নিয়ে সংকট দেখা দেয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে কয়েক ধাপে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শতভাগ বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, জেলায় ৯৫ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে গেছে। কিছু বই বাকী রয়েছে। বিশেষ করে নবম শ্রেণির তিনটি বই। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহমদ বলেন, এ সংক্রান্ত জরুরী মিটিংয়ের জন্য রাজধানী ঢাকায় আসছি। আমরা আশা করছি রমজানের আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে অবশিষ্ট থাকা বই পৌছে দেয়া সম্ভব হবে।