মেঘলা সিলেটে উজ্জ্বল বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ৩:৫৯:২৯ অপরাহ্ন
আহবাব মোস্তফা খান :
প্রকৃতির মুখ ভার দিনভর। আকাশজুড়ে মেঘের খেলা। ভর বিকেলে মনে হলো সন্ধ্যা রাত । সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাই জ¦লে উঠলো ফ্লাড লাইট। কৃত্রিম আলোয় চললো খেলা। এমন মেঘ-কালো দিনেও উজ্জ্বল ছিলো মুশফিক-লিটন-হৃদয়ের হৃদয় জয় করা ব্যাট। সিলেটে দেখা মিললো বাংলাদেশের আরো একটি রেকর্ডময় দিনের।
কিন্তু এমন রেকর্ডময় দিনটিতেও আক্ষেপের গল্প রচিত হলো। রানের এভারেস্ট ছুঁয়েও পরিত্যক্ত হলো আয়ারল্যান্ডের সাথে দ্বিতীয় ওয়ানডে। সিলেটে থামলোনা বৃষ্টি। সিলেটের মাঠের পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা খুব উন্নত। তবু হলোনা বাকী ইনিংস। রাত ৮টা ৩২ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো ম্যাচ।
কিন্তু পরিত্যক্ত হলেও রেকর্ডের অমলিন খাতায় লিখে রাখা যাবে সিলেটের কালকের দিনটি। রেকর্ডের কোনটা রেখে কোনটা আগে বলা যায়। কাল শুরুতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৫ হাজার রান পূর্ণ করলেন তামিম ইকবাল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগে ১৪ রান দূরে ছিলেন তামিম। অবশেষে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সিলেটেই সেই কাঙ্খিত ইতিহাস গড়লেন তিনি। এরপর লিটন তার ৭০ রানের ইনিংসে দেখা পান ওয়ানডেতে যৌথভাবে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ২ হাজার রানের মাইলফলকের। এরপর তো কেবল মুশফিকুর রহিমের গল্প। কাল দুটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন এই ক্রাইসিস ম্যান। যোগ দিলেন ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের ক্লাবে। করলেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরীর রেকর্ডও। কাব্যময়তায় যেন ভরা ছিলো তার ব্যাটিং। লেংথ-মুশফিক যা-ই পেয়েছেন, কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। যখন আইরিশ বোলাররা একটু আঁটসাঁট বোলিং করতে পেরেছেন, মুশফিক বের করে এনেছেন স্কুপ। ড্রাইভ, ইনসাই-আউটে শট তো ছিলই। ১৪ চারের সঙ্গে মুশফিক মেরেছেন ২ ছক্কা।
মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি পূরণ করলেন মুশফিক। এরপর ৬০ বলে সেঞ্চুরি। তার ব্যাটেই এক ম্যাচের ব্যবধানে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড নতুন করে লিখল বাংলাদেশ। ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুললো ৩৪৯ রান। মুশফিকের ব্যাটের পরপরই নামল বৃষ্টি। যেন মুশফিক-ঝড় থামার অপেক্ষায়ই ছিল প্রকৃতি।
শেষ ওভারে প্রথমবারের মতো যখন স্ট্রাইক প্রান মুশফিক, ৫৬ বলে তাঁর রান ৯১। সে বলে ডাবলসের পর গ্রাহাম হিউমকে রিভার্স স্কুপে চার মেরে সেঞ্চুরিকে আনলেন আরো কাছে। পরের বলে ওয়াইড লং অনে খেলে আবার ডাবলসে মুশফিক চলে যান ৯৯ রানে। শেষ বলে মিডউইকেটে খেলে সিঙ্গেল নিয়ে মুশফিক মাতেন উল্লাসে, যে উল্লাস রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরির। মুশফিক ভাঙলেন সাকিব আল হাসানের রেকর্ড, ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছিলেন ৬৩ বলে।
সাকিব ও নাজমুল ৮ বলের মধ্যে ফিরলেও বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল কারিগর তিনিই। তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে মুশফিকের জুটিত ৭৮ বলেই ওঠে ১২৮ রান।
১০ম ওভারের শেষ বলে মার্ক অ্যাডায়ারের দূর্দান্ত থ্রোতে দলীয় ৪২ রানে রানআউট হন তামিম। ৩৪তম বছরে পা রাখার দিন তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ২৩ রান। অধিনায়কের বিদায়ের পর তিন নাম্বারে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে লিটন দাস ও শান্ত গড়েন শতরানের জুটি। এই জুটিতেই হামফ্রেজকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৮ম ফিফটি তুলে নেন ওপেনার লিটন দাস।
ছন্দ নিয়ে ব্যাট করতে থাকা লিটনকে থামিয়ে দেন কার্টিস ক্যাম্ফার। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের নবম ব্যাটার হিসেবে ২ হাজার রানের ক্লাবে যোগ দেন লিটন। লিটন খেলেছেন ৩টি ছক্কা ও ৩টি চারের সাজানো ৭১ বলে ৭০ রানের ইনিংস। লিটনের বিদায়ে ভাঙে শান্তর সঙ্গে ১০১ রানের জুটি। এরপর ৪ নাম্বারে আসেন সাকিব আল হাসান।
গত ম্যাচে ৯৩ রান করা সাকিব কাল থামেন ১৯ বলে দুই চারে ১৭ রান করে। সাকিবের পর ৭৭ বলে ৭৩ রানের নজরকাড়া এক ইনিংস খেলে আউট হন শান্ত। তার আউটের পর ক্রিজে আসেন প্রথম ওয়ানডের ম্যাচ সেরা তাওহিদ হৃদয়। এবার সবার হৃদয় জয় করে নিলেন হৃদয়। মুশফিকের সাথে সমানতালে চালান ব্যাট। কালও বেশ ছন্দ নিয়েই ব্যাট করেন এই ডানহাতি। তবে ৪৭তম ওভারের ২য় বলে মার্ক এডায়ারের বলে উইকেটরক্ষক ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় তাকে। ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে নিজের ১২৮ রানের জুটি। আউট হওয়ার আগে হৃদয়ের নামে পাশে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৯ রান। মাত্র ১ রানের জন্য ক্যারিয়ারের টানা দুই ওয়ানডে ফিফটি থেকে বঞ্চিত হলেও হৃদয় জয় করেই প্যাভিলিয়নে ফেরন হৃদয়।
কিন্তু এমন হৃদয় জয় করা ব্যাটিং আক্ষেপ হয়েই থাকলো। মুশফিক, হদয় ও লিটন ঝড়ের পর জয় হলো বৃষ্টির। পরিত্যক্ত হলো এমন রেকর্ডময় ম্যাচটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩৪৯/৬ (তামিম ২৩, লিটন ৭০, শান্ত ৭৩, সাকিব ১৭, মুশফিক ১০০*, হৃদয় ৪৯, ইয়াসির ৭, তাসকিন ১* ; অ্যাডাইর ১০-১-৬০-১, হিউম ১০-২-৫৮-৩, ক্যাম্পার ১০-০-৭৩-১, হামফ্রেইস ৭-০-৫৯-০, ম্যাকব্রাইন ৯-০-৬৮-০, টেক্টর ৪-০-২৮-০)।