চার বছরে সড়কপথে ২৫ হাজার প্রাণহানি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ৮:২৩:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত চার বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার প্রাণহানি হয়েছে। বাসের বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত সড়কে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমন চিত্র। তবুও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নির্বিকার বিআরটিএ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, সারা দেশে ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২১১ জন। ২০২০ সালে ৫ হাজার ৪৩১ জন এবং ২০২১ সালে ৬ হাজার ২৮৩ জন। ২০২২ সালে দেশে দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিজুড়ে সারা দেশে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৮৭ জন এবং আহত হন ৭১২ জন। এর মধ্যে ১৮৩টি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।
সংগঠনটির পর্যবেণে বলছে, বাসের বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানোর কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
সবশেষ গত রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ১৯ জন নিহত হন। এক্সপ্রেসওয়েতে বাসটির সামনের ডান পাশের চাকা ফেটে যায়। বাসটি তখন রেলিং ভেঙে পাশের খাদে পড়ে যায়। সে সময় বাসের গতিও ছিল বেশি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এর প্রধান একটি কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সড়কে আধুনিক প্রযুক্তি বসিয়ে মনিটরিং জোরদার করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘চালক-সহকারীদের অদতায় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। দুর্ঘটনা ঘটলেই শোনা যায়, চালকের লাইসেন্স নেই, গাড়ির ফিটনেস নেই। গাড়িটি দ্রুত গতিতে চলছিল, চালক মাদকাসক্ত ছিল। পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য কিংবা মোবাইল ফোনে চালকের কথা বলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উত্তরণের কোনও উদ্যোগ বা পদপে দেখতে পাচ্ছি না। উল্টো সড়কে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য চলছে।’
তবে চালকদের সঙ্গে পরিবহন মালিকদেরও দায় দেখছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘চালকদের সংগঠনের সঙ্গে পরিবহন মালিকরাও জড়িত। তাদের যে একটা নেক্সাস এই কারণেই দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না, বরং বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক। এদের কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।’ সোমবার ঢাকার কাকরাইলে তথ্য ভবনে সড়ক নিরাপত্তা রিপোর্টিং সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা আছে। তবে সড়ক পরিবহন আইনে বিভিন্ন শ্রেণির মহাসড়কে আলাদা গতিসীমা নির্ধারণ করার কথা বলা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
গতিসীমার বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘গাড়ির গতিসীমাটা কীভাবে নির্ধারণ হবে তার কোনো গাইডলাইন নেই। আমরা বুয়েটের এআরআইকে দায়িত্ব দিয়েছি স্প্রিড লিমিট গাইডলাইন তৈরি করার জন্য। কিন্তু এখনো সেটি হাতে পাইনি।’
বুয়েট অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি বলেন, ‘গাড়ি, রাস্তা এবং ড্রাইভার এই তিনটির একটি কম্পোন্টের ত্রুটি থাকলে দুর্ঘটনা ঘটবে। দুর্ঘটনা রোধে আমরা টেকনিক্যাল কোনো হেল্প নিচ্ছি না। ‘স্পিড ক্যামেরা’ নামে একটা মেকানিজম আছে, সেটিও আমরা ব্যবহার করতে পারি। তা ছাড়া দুর্ঘটনা রোধে স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ের অভাব আছে। আইনের বাস্তবায়ন নেই। তাই এখন সময় এসেছে ট্রান্সপোর্টেশন ডিজাইনকে রিশিডিউল করার।’