এখনও আছে যক্ষ্মা ঝুঁকি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২৩, ৯:৫৪:২৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আছে। তবে যক্ষ্মা এখনো জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এখনো প্রতিবছর বহু মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারাও যাচ্ছেন। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসার আওতা এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃত্যু ৭৫ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে। ২০১৫ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু ছিল ৭৩ হাজার। সে হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামাতে হবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থেকেই বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণ ৫০ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০২১ সালে দেশে প্রতি ১২ মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় মারা গেছেন। সংস্থার সর্বশেষ বৈশ্বিক যক্ষ্মা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ নতুন করে যক্ষ্মার জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (এমডিআর) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৈরি করা যক্ষ্মা এবং ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আছে। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গতকাল পালিত হলো বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’।
সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালে ৩ হাজার ৮৪২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫৪৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত বছর ২০২২ সালে এর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬৮০ জন। ২০২২ সালে শনাক্ত হওয়া যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ৪১৮টি শিশু ছিলা-যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। এর মধ্যে ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪৬ জন।
এদিকে, সিলেটে যক্ষা আক্রান্তদের মাঝে চা-বাগানের জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। চা-বাগানগুলোর অনেক বাসিন্দা অপুষ্টিতে ভোগেন। এ জন্য চা-বাগানগুলোতে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিলেট সিভিল সার্জন অফিস।
চিকিৎসকরা জানান, যক্ষ্মা যে শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়ায়, সেটি ভুল ধারণা। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ে। রোগ কিংবা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসেও আক্রমণ করতে পারে যক্ষ্মার জীবাণু। এ রোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এবং দেহে প্রবেশ করে প্রথমে ফুসফুসে আশ্রয় নেয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত সব রোগীর কাছ থেকেই জীবাণু ছড়ায় না। যাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাদের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়। গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ক্যানসার ও এইচআইভি আক্রান্ত মানুষও রয়েছেন ঝুঁকিতে। ঝুঁকির তালিকায় আছেন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও।
যক্ষ্মার উপসর্গগুলো হলো দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ওজন হ্রাস, জ্বর এবং রাতে ঘাম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।