আহলান সাহলান, মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৪:২৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া সৃষ্টি করা। তাকওয়া আসলে এমন এক সম্পদ যা আল্লাহর ভালোবাসা এবং ভয় থেকে সৃষ্টি হয়। ভালোবাসা এবং ভয়ের এ মানসিক অবস্থার নাম তাকওয়া যা সকল ভালো কাজের উৎস এবং সকল পাপ কাজ থেকে বাঁচার সত্যিকার উপায়। তাকওয়া অজর্নের মাধ্যমেই একজন ঈমানদার মুত্তকী হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষকে মুত্তাকী হওয়ার কথা বলেছেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন ‘হে ইমানদারেরা তোমাদের উপর সাওম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগেকার লোকদের উপর। আশা করা যায় এতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে।’
মুত্তাকী মানুষ অন্যায় বা গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৎকর্মশীল পূণ্যবান মানুষ হিসেবে নিজেকে গঠনের হাতিয়ার হিসেবে সিয়াম অর্থাৎ রোজার অনুশীলনের বিধান বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় আমাদের উচিত, যথাযথভাবে এই বিধান পালন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই পবিত্র মাসেও একশ্রেণির মানুষকে দেশ ও জাতির তথা মানুষের জন্য ক্ষতিকর কর্ম থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে দেখা যায় না। বরং অনেককে এই পবিত্র মাসকে পুঁজি করে অধিক মুনাফা অর্জনের লোভ লালসায় জড়িত হতে দেখা যায়। অসৎ আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের বিভিন্ন নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মূল্যবৃদ্ধি করে সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষকে সীমাহীন আর্থিক কষ্টে ফেলতে দেখা যায়।
এ ধরণের কাজ নিশ্চিতভাবেই ইসলামী বিধিবিধান বিশেষভাবে সিয়ামের আদর্শ ও চেতনার পরিপন্থী। লোভ লালসার কাছে আত্মসমর্পণ রমজানের সংযমের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধী ও অসংগতিপূর্ণ। এছাড়া রমজানের মতো সাধনার পবিত্র মাসেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘুষ দুর্নীতির মতো কবিরা গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকতে দেখা যায় না। বরং ঈদের বাড়তি খরচের দোহাই দিয়ে এই পবিত্র সংযমের মাসে তাদের ঘুষ দুর্নীতির মাত্র বাড়িয়ে দিতে দেখা যায়। এ ধরণের অপকর্ম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রমজানে দিনমান উপবাস থাকাকে যে অর্থহীন ও পূণ্যহীন করে দেবে, এটা ইসলামে স্পষ্ট বলে দেওয়া। নবী সা. বলেছেন, যে রমজান মাসের রোজা রেখে মিথ্যা এবং খারাপ কাজ ছাড়তে পাড়লো না তার সারাদিন না খেয়ে থাকায় আল্লাহর কিছুই যায় আসে না।
নবী সা. আরো বলেছেন, এমন অনেক রোজাদার আছে যারা রোজা রেখে কেবল ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই পায় না; আর যারা রাত জেগে নামাজ আদায় করে তাদের মধ্যেও এমন বহু লোক আছে, নামাজে দাঁড়িয়ে রাত জেগে কষ্ট করা ছাড়া যাদের আর কোনো লাভ হয় না।
কাজেই এসব কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি, কেবল না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয় বরং বরং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং ভয় থেকে তাঁর নির্দেশে মেনে চলার নামই রোহজ। যার সুন্দর একটি চর্চা আমরা পুরো একমাস জুড়ে রমজান মাসে করে থাকি। যে চর্চা আল্লাহ আমাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। যারা এই নিয়মে চলবে তারাই মুত্তাকী আর তাদের রোজাই আল্লাহর কাছে কবুল হবে। মুত্তাকী লোক কোনোভাবেই একজন রোজাদারকে তো দূরে থাক কোনো মানুষকে কষ্ট দিতে পারে না। সে মুসলমান হোক কিংবা অন্য কোনো মতেরই হোক।
সুতরাং সেসব ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তাদের ভেবে দেখা দরকার রমজান মাসের অজুহাতে যারা নিজেদের লোভের কারণে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন তারা কতোটা বড়ো ধরনের অপরাধ করছেন। আর তারা এই ধৃষ্টতা এমন মাসে দেখাচ্ছেন যে মাসে আল্লাহ এবং তাঁর নবী সা. ছাড় দিতে উৎসাহিত করেছেন। তাই তাদের এখনই সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত। তাদের মনে রাখা উচিত আল্লাহ যদি ধরেন তো কেউ বাঁচাতে পারবে না। সূরা বুরজের ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমার রবের ধরা বড়ো শক্ত ধরা।