আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৩, ৪:৩০:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: মাহে রমজানের সাতদিন পেরিয়ে আজ আমরা অষ্টম দিনে পা দিলাম। রমজানের প্রথম দশ দিন হলো রহমতের। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দশকে বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত দান করে থাকেন। রাসুল সা. বলেছেন ‘রমজানের ১ম দশ দিন রহমতের, মাঝের ১০ দিন মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভের এবং শেষের ১০ দিন নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের’। এরই মধ্যে আমরা দেখতে দেখতে রহমতের সাতদিন পেরিয়ে এসেছি। সামনে আর মাত্র তিনদিন বাকি। কাজেই দিন থাকতে আমাদের উচিত এমন সব কাজ বেশি বেশি করে করা যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত পেতে পারি।
কোন কাজ করলে পরে আমরা আল্লাহর রহমত পেতে পারি এ নিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই কুরআনুল কারীমে বলে দিয়েছেন। সূরা আ’রাফের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর রহমত ওইসব লোকদের নিকটবর্তী যারা নেক কাজ করে’।
কাজেই এখান থেকে বুঝা যায় আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম হলো নেক কাজ। রমজান মাস আমাদের নেক কাজের এক মহা সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে নেক কাজ করার যে পরিবেশ রমজানে তৈরি হয় তা অন্য কোনো মাসে রমজানের মতো হয় না। রমজারে মতো একটি মোবারকপূর্ণ মাস আমাদের উপহার দিয়ে মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর কাছাকাছি যাবার এক বড়ো সুযোগ করে দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিনিয়ত তাঁর বান্দাদের সুযোগ দিতে চান। মহান আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময়ের জন্য খোলা। তাঁর রহমতের বারিধারা মুষলধারে আমাদের উপর বর্ষিত হচ্ছে। আল্লাহ বান্দাদের উপর রহমত বর্ষণের সুযোগে থাকেন, কোন সুযোগে কীভাবে তাঁর বান্দাদের রহমত দিয়ে ভরপুর করবেন। আর তাইতো মানুষের ছোটো ছোটো নেক কাজসমূহকেও আল্লাহ তায়ালা গুরুত্ব দিয়ে অনেক বড়ো করে দেখেন।
বান্দার জন্য আল্লাহর যে কতো টান তা আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসীতে আমরা দেখতে পাই। রাসূল সা. বলছেন “আল্লাহ বলেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি। আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে কোনো আসর বা অনুষ্ঠানে স্মরণ করে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম আসর বা অনুষ্ঠানে স্মরণ করি। যদি সে আমার নিকট এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একহাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার নিকট একহাত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একবাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার নিকট হেঁটে হেঁটে আসে আমি তার নিকট যাই দ্রুত”।
কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কীভাবে আমাদের প্রতিনিয়ত তাঁর রহমতের চাঁদর দিয়ে ঘিরে রাখতে চাইছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা আমাদের মহান রবকে সেভাবে চিনতে পারি না। চিনতে চাই না কিংবা চিনবার চেষ্টাও করি না। আমরা নিজেদের দোষে আমাদের রবের সাথে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করি। আমরা প্রতিনিয়ত নানান ভাবে নেক কাজের উল্টো খারাপ কাজ করছি। এমনকি এই যে রহমতের মাস রমজান তাতেও আমরা নানান ছলচাতুরীতে বাড়তি মুনাফার লোভে মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর রহমত পেতে হলে এসব থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
রমজান মাস আমাদের সে সুযোগ সামনে এনে দিয়েছে। আমাদের উচিত এই রমজানকেই যেনো আমাদের নিজেদের সুধরে নেবার বড়ো একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাই। আমাদের মনে রাখতে হবে খারাপ কাজের পরিমাণ আমাদের আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। গোটা দুনিয়া আল্লাহর রহমতে উপর টিকে আছে। আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। কীভাবে মহান আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আমাদের ঘিরে রেখেছেন তা চারপাশের সৃষ্টি জগতের দিকে একটু ভালো করে চোখ ফেরালেই দেখতে পাবো। কাজেই আমাদের উচিত আল্লাহর রহমত পাবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
আল্লাহর রহমত লাভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো নবী সা. এর উপর দুরুদ পড়া। নবী সা. বলেছেন ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরুদ পড়ে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করেন। আর তাই যখন আমরা অলস সময় পার করি সে সময় চাইলে বেশি বেশি করে দুরুদ পড়তে পারি। আল্লাহর রহমত আমাদের বিপদ আপদ থেকে বাঁচাতে পারে। জীবনকে সুন্দর করে দিতে পারে।