ইফতারের সাতশো বছরের ঐতিহ্য শাহজালালের মাজারে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০২৩, ৮:৪২:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ৬ রমজান বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা। শাহজালাল র. দরগাহের মুসাফির খানায় একে একে আসতে শুরু করেছেন মুসাফিররা। নারী পুরুষ মুসাফিরদের জন্য এখানে প্রতিদিন থাকে ইফতারের আয়োজন। থাকে সেহরির ব্যবস্থাও। শাহজালাল র. মাজারের এই ঐতিহ্য সাতশো বছরের। ১লা রমজান থেকে যুগ যুগ ধরেই এভাবে এই মাজারে মুসাফিররা আসছেন, অপ্যায়িত হচ্ছেন। মাঝে করোনার জন্য কেবল দু’বছর তা বন্ধ ছিল।
সাধারণত পথিক, মাজারের আশপাশের ফকির ও গরিব লোকেরা এই মুসাফিরখানায় আসলেও অনেক বিত্তশালীও এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে থাকেন। তারা নিয়ে আসেন মুসাফিরদের জন্য খাশি, গরু ইত্যাদি। সিলেটের বাইরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও মাজারে ভক্তবৃন্দ শুধু ইফতারের স্বাদ নিতে এখানে আসেন।
বুধবার কথা হয় রেহনুমা চৌধুরী নামে এক বিত্তশালী নারীর সাথে। তিনি কুমিল্লাহ থেকে দুই মেয়েকে সাথে করে এসেছেন এখানে ইফতার করতে। তিনি বলেন তাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল শাহজালালের মাজারে গরিব দুখিদের সাথে তাদের মতো করে ইফতার করতে। আজ সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। ইফতার যাই হোক এরমধ্যে আলাদা এক প্রশান্তি আছে বলে জানান তিনি।
ইফতার করতে আসা একজন জানান, চাইলে আমি পাশের হোটেলেই ইফতার করতে পারতাম। সেই সামর্থ্য আমার আছে। কিন্তু দরগাহে বসে সবার সাথে ইফতার করার সুযোগ সব সময় আসে না তাই এখানে ইফতার করতে এসেছি।
শাহজালালের র. মাজার সূত্রে জানা গেছে, মুসাফিরদের সাহরিতে খাওয়ানো হয় ভাত, তরকারি অথবা খিচুড়ি। ইফতারে খাওয়ানো হয় খেজুর, জিলাপি, পিঁয়াজি, খিচুড়ি। মাঝেমধ্যে আখনিও দেওয়া হয়। ইফতারে মানুষ বেশি হয়। নারী ও পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট বসার স্থান রয়েছে মাজারে। মাজারের লঙ্গরখানার পাশেই মুসাফিরখানায় নিচতলায় নারী মুসাফিরেরা বসেন। দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মুসাফিরেরা বসে খাবার গ্রহণ করেন। নারীদের সংখ্যা বেশি হলে দ্বিতীয় তলার একপাশে বসার ব্যবস্থা করা হয়। রান্না ও খাবার পরিবেশনের জন্য রয়েছেন মাজারের বাবুর্চি ও সেচ্ছাসেবক। আজানের সাথে সাথে ধনী গরিব একসাথে বসে ইফতার করেন। আগে লোকজন বেশি হতো। এখন কোনোদিন একশো, কোনোদিন দেড়-দুইশো মানুষ ইফতার করতে আসেন বলে মাজারের খাদিমদের একজন জানান। তবে বৃহস্পতিবার লোকজনের আগমন বেশি হয়। তখন ইফতারে তা ডাবল হয়ে যায়।
মাজারের লঙ্গরখানায় ইফতারের রান্নার আয়োজন শুরু হয় দুপুর থেকে। লঙ্গরখানার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, চুলায় আগুন দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন মহিলা সবজি কাটছেন ও শিলপাটায় মশলা বাটছেন। বাবুর্চি সহকারীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
বাবুর্চি বলেন, ইফতারে থাকে ভুনা খিচুড়ি, ছোলা খেজুর জিলাপি পিঁয়াজু। প্রতিদিন একরকম খাবার দেওয়া হয় না। মাঝে মাঝে অনেক মানুষজন ফল, মাংস দিয়ে যান। তখন খাবার পরিবর্তন করা হয়। সেহেরিতে নিয়মিত খাবার ভাত, মাছ বা মাংস থাকে। মাঝে মাঝে খিচুড়িও দেওয়া হয়।