নির্দেশনাতেই আটকে আছে শামসুদ্দিন বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ৩:২৯:৫০ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল :
নানা কারণে থমকে আছে সিলেটের বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের অগ্রগ্রতির কাজ। সিলেট সফরে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্তৃক ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রুপান্তরের নির্দেশের ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্দেশনার কোন বাস্তব প্রতিফলন নেই। নির্মাণাধিন জেলা সদর হাসপাতাল চালুর আগে বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে শামসুদ্দিন আহমদ বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের জন্য সিলেটবাসীর অপেক্ষা বাড়ছে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে সিলেটের একক ‘করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ২ বছরেও বেশী সময় সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলে। করোনার সংক্রমণ কমে গেলে হাসপাতালটিতে ফের চালু হয় সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা। বর্হিবিভাগে রোগী দেখার পাশাপাশি সচল হয় সার্জারী ইউনিট। বর্তমানে হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা আবাসিক/অনাবাসিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেটে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর হাসপাতালটি ২০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৮ বছর। এখন পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি শিশু হাসপাতালের।
গত ২ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফরে এসে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, অচিরেই বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও চালু না হওয়ায় মন্ত্রীর আশ্বাস কতটুকু কাজ হবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মন্ত্রীর নির্দেশনার ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ও লোকবল সংকটে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আর গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় ২০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজও শুরু হয়নি। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রূপান্তর ও সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এরপর বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকায় অবকাঠামোগত কিছু সংস্কার করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করতে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ কার্যক্রম শুরুই হয়নি। চালু হয়নি শিশু হাসপাতালের কার্যক্রমও। কাজ না হওয়ায় বরাদ্দের ১০০ কোটি টাকা ফেরত যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (বর্তমান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) চৌহাট্টা থেকে কাজল শাহ এলাকায় সরিয়ে নিলে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে পুরোনো হাসপাতালের স্থাপনা। ১৯৯২ সালে এটি সিলেট সদর হাসপাতাল হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সাল থেকে এটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল ছিল। ১৯৯৮ সালে সিলেট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল নামকরণ করা হয়।
তবে তখন তাড়াহুড়ো করে লোকবল ও যন্ত্রপাতি সংকট নিয়ে চালু হয় শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল। আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাও অনুপস্থিত। জরুরি বিভাগ থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় শুরু থেকেই তা বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করতে পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগের জন্য ২০১৫-১৬ সালে ৪ দফা চিঠি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এর মধ্যে ২০২০ থেকে ‘করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ ঘোষণা করে সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশে ২০০ শয্যার জেলা হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে। এটি চালু হলে শামসুদ্দিন হাসপাতালের কার্যক্রম সেখানে শিফট করা হবে। এরপর বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগে লোকবল নিয়োগসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সদ্য সাবেক পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমতি হয়নি। ফলে লোকবলও নিয়োগ হয়নি। কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করলেই হাসপাতাল হয় না। হাসপাতালের জন্য লোকবল, যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন হয়। এসব না থাকায় বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল চালু করা যায়নি।
২০০ শয্যায় উন্নীত করতে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজটি গণপূর্ত বিভাগ না স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ করবে তা নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। শেষ সময়ে এসে সিদ্ধান্ত হয় গণপূর্ত বিভাগ কাজটি করবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তারা কাজের নকশা জমা দিতে পারেনি। ফলে কাজ আর সামনে এগুতে পারেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে কাগজ-কলমে হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও জনবল নেই ৩০ শয্যা হাসপাতালেরও। করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে এসে চালানো হয় এই হাসপাতালের কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর চৌহাট্টায় শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশে আগের আবুসিনা ছাত্রাবাসের স্থানে নির্মিত সিলেট জেলা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। আগামী জুনমাসে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। হাসপাতালটি চালু হলে শামসুদ্দিন হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রুপান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।