সড়কে থামছেনা মৃত্যু মিছিল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৮:১৫ অপরাহ্ন
মার্চে ৪৮৬ দুর্ঘটনায় ৫৬৪ প্রাণহানী
৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা আঞ্চলিক সড়কে
জালালাবাদ রিপোর্ট : সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতি দিনই সড়কে ঝরছে প্রাণ। মাস শেষের গণনায় দেখা যায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। গত মার্চ মাসেও ৪৮৬ দুর্ঘটনায় সড়কে ঝরেছে ৫৬৪ প্রাণ। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭ জন।
বুধবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মার্চ মাসের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য জানিয়েছে। সড়ক্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে।
সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও গত মাসে ছয়টি নৌ দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
৪০ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে। এছাড়া প্রায় ৩৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনার হার ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং প্রাণহানি ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
সিলেট বিভাগে ৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৯ জন।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন (৩৪ দশমিক ৩৯শতাংশ), বাস যাত্রী ৫৩ জন (৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ), ট্রাক,কাভার্ডভ্যান,পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি আরোহী ৪৯ জন (৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ), মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ২২ জন (৩ দশমিক ৯০ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক,সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান,লেগুনা) ১০৪ জন (১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন,ভটভটি,আলমসাধু,পাখিভ্যান,মাহিন্দ্র,টমটম) ২৪ জন (৪ দশমিক ২৫ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল,প্যাডেল রিকশা, রিকশা ভ্যান আরোহী ১১ জন (১ দশমিক ৯৫ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৪টি (৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯৭টি (৪০ দশমিক ৫৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৯টি (১২ দশমিক ১৩ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৩টি (৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৩টি (০ দশমিক ৬১ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ৮৫টি (১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৪২টি (৪৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৩৯টি (৮ দশমিক ০২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি (৩ দশমিক ২৯ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ , সকালে ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ , দুপুরে ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিকালে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং রাতে ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগীয় পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে।
এদিকে, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বুধবার যাত্রী কল্যাণ সমিতিও দুর্ঘটনার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাদের হিসেবে, বিদায়ী মার্চ মাসে ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত এবং ১১৩৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ৫৩টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৯টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত, ১৪ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ হয়েছেন।