ঈদে সিলেটের অধিকাংশ সিএনজি পাম্প বন্ধের শঙ্কা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ৩:০৫:৪৯ অপরাহ্ন
লোড বাড়ানোর দাবী মালিকদের
এমজেএইচ জামিল : মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটের অধিকাংশ সিএনজি পাম্পের মাসিক লোড শেষ হয়ে পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়া এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনিক ৫টা থেকে ১১টা ৬ ঘন্টা পাম্প বন্ধ রাখার পরও মাসের ২০ তারিখের পর সিলেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের আগে ও পরে ১৩দিন ২৪ ঘন্টা পাম্প খোলা রাখার সিদ্ধান্তে আগ্রহ নেই সিলেটের পাম্প মালিকদের। লোড না বাঁড়িয়ে পাম্প খোলা রাখলে কোন লাভ নেই বলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। বেশী সময় খোলা রাখার কারণে ঈদের সময় সিলেটের অধিকাংশ সিএনজি পাম্প বন্ধের আশঙ্কা করেছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সংকট চলছে। বিভিন্ন পাম্পে দীর্ঘ ১ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা লাইন দিয়ে গ্যাস নিতে হচ্ছে যানবাহন চালকদের। অনেক সময় গ্যাস নিতে গিয়ে রাত পার হয়ে যায়। চালকরা বাধ্য হয়ে ঘুম চোখে গাড়ি চালান। ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট সূত্রে জানা যায়, সিলেটে সিএনজি পাম্প মালিকদের ব্যবসা পরিচালনা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। সিলেটে দীর্ঘ ১৫ বছরেও বাড়ানো হয়নি গ্যাসের লোড। ফলে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকটি পাম্পের লোড শেষ হয়ে যায়। এছাড়া মাসের ২০ তারিখের পর সিলেটের অধিকাংশ সিএনজি পাম্প লোডের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তখন খোলা থাকা গুটিকয়েক পাম্পে যানবাহনের ভীড় বাড়তে থাকে। গ্যাসের জন্য চালকদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। লোড বৃদ্ধির জন্য বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেও কোন ফল আসছেনা বলে জানান পাম্প মালিকগণ। এরমধ্যে ঈদ উপলক্ষে ১৩ দিন ২৪ ঘন্টা পাম্প খোলা রাখায় সিলেটের ব্যবসায়ীদের কোন লাভ নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২২ অথবা ২৩ এপ্রিল হতে পারে ঈদুল ফিতর। ফলে ঈদের আগে ৫ দিন ধরলে ১৭ এপ্রিল থেকে ২৪ ঘন্টা পাম্প খোলা থাকবে। কিন্তু এই সময়ে সিলেটের বেশ কয়েকটি পাম্প বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া ঈদের আগের দিন ২১ এপ্রিল থেকে সিলেটের ৭৫ ভাগ পাম্প বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ২৪ ঘন্টা পাম্প খোলা রাখলে যানবাহনের চাপ বাড়ার সাথে বাড়বে গ্যাসের চাহিদা। ফলে চলতি মাসে আরো আগেই পাম্প বন্ধ হওয়ার চিন্তায় একাধিক পাম্প মালিক। ফলে ঈদে পরিবহন সেক্টরে দুর্ভোগের শঙ্কা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার সময় প্রতিটি সিএনজি স্টেশন নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসিক লোড নির্ধারণ করে আবেদন করে থাকেন। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ পাম্পগুলোকে সেই পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করার অনুমোদন দিয়ে থাকে। লোড শেষ হলে কর্তৃপক্ষ পাম্পগুলোকে পরিমাণের বেশী গ্যাস বিক্রি করতে নিষেধ দেয়। নিষেধ না মানলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে বন্ধ করে দেয়া হয় পাম্প। প্রতিদিনই নতুন নতুন যানবাহন বাড়ায় গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সিএনজি পাম্প মালিকগণ তাদের মাসিক লোড বাড়াতে পারছেন না। এ ব্যাপারে জ¦ালানী মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন সমাধান খুঁেজ পাচ্ছেন না পাম্প মালিকগণ। গেল বছরের আগস্ট মাসে লোড বাড়ানোর জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ডিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এরপরও আজ পর্যন্ত লোড সঙ্কটের কোন সমাধান হয়নি। ফলে বার বার বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন পাম্প পাম্প মালিকগণা। আর লোড শেষজনিত কারণে পাম্প বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যানবাহন চালকদের।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগে বর্তমানে ৫০ টির মতো সিএনজি ফিলিং স্টেশন চালু রয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ^ব্যাপী জ¦ালানী ও গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেয়। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। সরকারীভাবে সপ্তাহে একদিন সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেয়া হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। সিএনজি স্টেশন বন্ধ করলে এর প্রভাব পেট্রোল পাম্পের উপর পড়তে পারে সেই আশঙ্কা থেকে আপাতত সপ্তাহ জুড়েই স্টেশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার। তবে লোডের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা থাকায় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে হার্ডলাইনে যেতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে এর মধ্যে গত ১ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২ এপ্রিল থেকে সিএনজি পাম্পসমূহ বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এরপর আবার ৯ এপ্রিল রোববার ঈদের আগে ৫ দিন ও পরে ৭ দিন সর্বমোট ১৩ দিন ফিলিং স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঐদিন বিআরটিএ সদর দপ্তরে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রস্তুতিসভা শেষে তিনি এ তথ্য জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের আগে ৫ দিন ও পরে ৭ দিন ফিলিং স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। ঈদের দিনও খোলা থাকবে।
তিনি বলেন, সবসময় ঈদের আগে তিন দিন ও পরে চার দিন পণ্যবাহী যান, বিশেষ করে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকে। কিন্তু বাস্তবে ঈদের পর দিন থেকেই চলাচল শুরু হয়ে যায়। এবার সার্বিক বিবেচনায় শুধু ঈদের আগের তিন দিন সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, সিলেট বিভাগে জালালাবাদ গ্যাসের অধীনে আগে প্রতিদিন ৪০০ মিলিয়ন গ্যাস বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এখন দেওয়া হচ্ছে ২৬১ মিলিয়ন। তা দিয়েই চলতে হচ্ছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি গ্যাস প্রয়োজন হয়। কারণ গ্যাস পাম্পের পাশাপাশি এখানে রয়েছে শিল্পাঞ্চল। এছাড়া সিলেট নগরীসহ বিভাগের প্রায় সকল পাম্পকে মাসে নির্দিষ্ট বরাদ্দ দেয়া হয়। ঈদ উপলক্ষে লোড বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে ১৩ দিন ২৪ ঘন্টা পাম্প খোলা থাকলেও লোড বাড়ানো হবেনা। পাম্প মালিকদেরকে তাদের নির্ধারিত লোডের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কোন পাম্পের গ্যাসের লোড শেষ হলেও বিকল্প হিসেবে পেট্রোল ও ডিজেল রয়েছে। তাই জরুরী প্রয়োজনে যে কোন যানবাহন অন্য জ¦ালানো ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের সংকট দিন দিন ঘনীভুত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তাই দেশে গ্যাসের ব্যবহারের সীমিত রাখার চেষ্টা চলছে। এমন সময়ে গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। নির্ধারিত লোড দিয়ে মাস শেষ করতে হবে।
এ বিষয়ে পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় সভাপতি আমিরুজ্জামান চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, গ্যাসের লোড না বাড়িয়ে সময় বাড়িয়ে পাম্প মালিকদের কোন লাভ নেই। বরং দুর্ভোগ আরো বাড়বে। খোলা থাকার কারণে পাম্পগুলোতে যানবাহনের সারি আরো দীর্ঘ হবে।
তিনি বলেন, আমরা ১৫ বছর আগের লোড দিয়ে এখনো পাম্প পরিচালনা করছি। এই সময়ে দেশে যানবাহন বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়েনি পাম্প। ফলে পুরনো পাম্পগুলোকে ১৫ বছর আগের লোড দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে। লোড বাড়ানোর জন্য আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে বার বার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোন ফলাফল আসেনি। ঈদ উপলক্ষে ২৪ ঘন্টা চালু থাকায় পাম্পগুলো বন্ধ না করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।