তিন জটে অস্থির জনজীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ২:০০:১২ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল: যানজট, মানুষজট আর উন্নয়ন কর্মজট, এই তিনজটে ঈদের আগমুহূর্তে অস্থির সিলেটের জনজীবন। এরমধ্যে চলছে টানা গরমে তীব্র দাবদাহ। জটে আর গরমে মানুষের অবস্থা চিড়াচ্যাপ্টা। মাথার উপরে অগ্নিঝরা সূর্য, নিচে সিটি কর্পোরেশেনের যত্রতত্র খুড়াখুড়ি, ঈদের বাজারে বের হওয়া লোকজনের চাপ আর ইচ্ছেমতো গাড়ি পার্কিং ও যানচলাচলে রাস্তায় বের হওয়া লোকজনের নাভিশ^াস উঠছে। কোথাও কোনো নিয়ম নেই যেন।
বৃহস্পতিবার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও অনুভব ছিল ৪২ ডিগ্রি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে চলমান তাপপ্রবাহ সহসাই কমবে না। আগামী রোববার পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে। ঐদিন শেষে সিলেট ও আশপাশের অঞ্চলের দিকে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে।
তীব্র গরমে সকালের দিকে লোকজন কম বের হলেও দুপুরের পর থেকে রাস্তায় বের হন লোকজন। তখন থেকেই মানুষ আর যানের জটলা বাধতে শুরু করে। ইফতারের পর মিনিট বিশেক তা ক্ষান্ত হয়ে আবার চলে গভীর রাত অব্দি। সাথে রয়েছে যত্রতত্র মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার আর সিএনজি অটোরিকশা পার্কিং। মূলত এই পার্কিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি যানজট তৈরি হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দৌরাত্ম্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার। পুরো সিলেট নগরী যেন জালের মতো ঘিরে রেখেছে সবুজ এই চলন্ত বোমা। বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, জেলরোড, ধোপাদীঘির পার, জিন্দাবাজার পাঁনসী-পাঁচভাই, ক্বীনব্রিজের মুখ, ডিসি অফিসের সামন, আম্বরখানা মিলে শুধু এই এক দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সিএনজির রয়েছে অন্তত দশটি স্ট্যান্ড। যেখান থেকে তারা নিয়মিত যাত্রী উঠানামা করায়। কেবল রিকাবীবাজার পয়েন্টে পুলিশ লাইনসের সামনে স্ট্যান্ড করে তুলে এইভাবে পুলিশের সাথে তাদের লুকোচুরি দেখা গেছে। এখানে আসলে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সিএনজি জটলা বাঁধতে পারে না।
সিলেটে যানজটের মূল কারণ এই মাত্রাতিরিক্ত সিএনজি বলে মনে করেন অনেকে। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কোর্ট পয়েন্টসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে সিএসজি তুলে দেওয়া, নগরে সিএনজির গণপরিবহনের মতো ব্যবহার বন্ধ করা এবং সেই জায়গায় ব্যাপকহারে টাউন বাস চালু করা। কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলছেন নগর নিয়ে উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত কাজ চলেছে। এর খেসারত দিতে হয় জনগণকে।
নগরীর আম্বরখানার বাসিন্দা আজমল আলী জানান জোহরের পর আম্বরখানা থেকে বন্দরের উদ্দেশে সিএনজিতে উঠি। এত যানজট যে পাঁচ মিনিটের রাস্তা আধাঘণ্টায় জিন্দাবাজার এসে বাধ্য হয়ে নেমে যাই। জিন্দবাজার থেকে বন্দরবাজার হেঁটে রওয়ানা দিই। এ আরেক মহাযুদ্ধ। মানুষ আর মানুষ। সবাই চলে এসেছেন ঈদের বাজার করতে। এরমধ্যে নারীদের সংখ্যাও অনেক। নারী হওয়ায় তাদের ঠেলাধাক্কা দিয়েও সামনে এগুনোর সুযোগ নেই। জিন্দাবাজার থেকে বন্দর এলাম আরও বিশ মিনিট। ততক্ষণে গরমে আর মানুষের চাপের ঘেমে নেয়ে একাকার।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে দেখা যায় নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দর, তালতলা, জামতলা, জল্লারপার, চৌহাট্টা, আম্বারখানা, লামাবাজার প্রতিটি রাস্তায় যান আর মানুষের প্রচন্ড ভিড়। ঈদের বাজারে ভিড় একটু থাকেই তবে সেই ভিড়ে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের খুড়াখুড়ি। বিভিন্ন পাড়া মহল্লার রাস্তায় এবং ড্রেনে অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখতে দেখা গেছে। কোনো কোনো জায়গায় নতুন রাস্তা খুড়ে আবার মাটি দিয়ে চাপ দিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে এসব রাস্তা আরও ছোটো হয়ে গিয়েছে, রাস্তার একদিক দিয়ে গাড়ি চলতে হয়। ফলে এসব রাস্তায় যানজট থাকায় তার প্রভাব এসে পড়ে বড়ো রাস্তায়। নগরীর জিন্দাবাজার-লামাবাজার সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি সড়ক। কিন্তু এই রাস্তায় পাঁচভাই-পাঁনসী রেস্টুরেন্টের সামনে গড়ে উঠেছে সিএনজি স্ট্যান্ড। ফলে রাস্তার বড়ো একটা অংশ আছে এদের দখলে। রাস্তা দখল করে থাকা এসব সিএনজির সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা ও দরকষাকষিতেও প্রায় সময়ই জটলা তৈরি হয়। জল্লারপার পয়েন্ট থেকে দাড়িয়াপাড়া রোডে দুইমাস আগে ফেব্রুয়ারিতে ড্রেনে স্লেভের কাজ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। কাজের মাঝখানে একদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি তা পরিদর্শনে যান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। পরদিন থেকেই এখানে কাজ বন্ধ। হোটেল নূরজাহান পর্যন্ত গিয়ে স্লেভের কাজ আর এগুয়নি। দেড়মাস ধরে এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে। এতে এই এলাকায় যে গাড়িগুলো রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন অফিসে আসতো তারা আগে স্লেভের উপর গাড়ি পার্ক করতো। এখন রাস্তায় পার্ক করে। ফলে এই রাস্তাদিয়ে জামতালা ও জিন্দাবাজার হয়ে আসা যানবাহন আগের মতো সহজে বাইপাস হয়ে বের হতে পারছে না। এখানে যানজটের মূল কারণ সিসিকের সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্ম। এর বাইরে রাস্তার কিনারা এবং ফুটপাত দখল করে হকার এবং ইফতারি বিক্রেতাদের ব্যস্ততা তো আছেই।
এসব নানান করণে ঈদের আগে মানুষ, যানবাহান আর খুড়াখুড়ি মিলে সিলেট নগরীর রাস্তাঘাটের হ য ব র ল অবস্থা দেখা দিয়েছে।