উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ব্রি ২৮ ও ২৯ ধান : ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত সিলেটের ১৫৭ হেক্টর জমি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৩:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: উচ্চফলনশীল, আবার আগাম উঠে যায়-এ দুই কারণে হাওরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্রি ধান ২৮। আর যেসব এলাকায় বোরোর পর রোপা আমন কিংবা এক ফসলি হিসেবে শুধু বোরো চাষ হয়, সেসব জমির জন্য ব্রি ২৯ জাতটি জনপ্রিয়তা পায়। দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় প্রায় তিন দশক ধরে অর্থাৎ ১৯৯৪ সাল থেকে বড় অবদান রাখছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত জাত দুটি। এরপর আরো অনেক ধান স্বীকৃতি পায়, কিন্তু কোনোটিই এ দুটির মতো দীর্ঘমেয়াদে টিকতে পারেনি। সম্প্রতি ব্রি ২৮ ও ২৯ ধানও তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাইয়ে।
জানা গেছে, অকালবন্যার আতঙ্কে থাকেন হাওরের কৃষক। এ কারণে তারা আগাম জাতের ধানের দিকে ঝোঁকেন। এক্ষেত্রে কয়েকটি দেশীয় জাতের ধানই ভরসা। কিন্তু এগুলোর ফলন তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষক উচ্চফলনশীল জাতেই বিকল্প খোঁজেন। তুলনামূলকভাবে আগে ওঠায় ব্রি ২৮ই তাদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। কয়েক বছর ধরে এ জাতের ধান চাষ করে যেমন ভালো ফলন পেয়ে আসছেন, তেমনি বন্যা আসার আগেই ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। কিন্তু গত বছর হাওরের কিছু এলাকায় এ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এবার আক্রমণটা সবচেয়ে বেশি। হাওরাঞ্চলের পাশাপাশি তুলনামূলক নিচু জেলাগুলোর কৃষকও চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি ২৮ ধান চাষ করে বেশ বিপাকে পড়েছেন। চিটা হয়ে যাওয়ায় অনেকে এবার ধানের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তারা যদিও বলছেন, কয়েক বছর ধরেই ব্রি ২৮ ও ২৯ ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বোরো আবাদ করা হয়েছে মোট ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরভুক্ত সাত জেলায় ৯ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। আর কয়েক সপ্তাহ পরই এসব অঞ্চলে শুরু হবে ধান কাটার উৎসব। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাওরের প্রায় ৪৪২ হেক্টর জমির ব্রি ২৮ ধান। ব্রি ২৯ জাতের ধানেও এবার রোগটি ছড়িয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে ৭৭ হেক্টর, নেত্রকোনায় ৬৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৫, সিলেটে ১০, মৌলভীবাজারে ৪৮, হবিগঞ্জে ৮৯ ও সুনামগঞ্জে ১০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এ সাত জেলার ৩৬৭ হেক্টর জমির ব্লাস্ট এরই মধ্যে দমন করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি।
সুনামগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪২টি হাওরের জমিতে এবার ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে তাহিরপুর, মধ্যনগর, শাল্লাসহ অনেক এলাকার জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। লোকসানের মুখে দিশেহারা কৃষক।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, হাওরবেষ্টিত এ জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যদিও চাষ হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪৩ হাজার ২৭২ হেক্টর জমিতে ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষ হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ জাতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ বেশ ভাবিয়েছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের। মধ্যনগর উপজেলায়ও একই অবস্থা। চিটা ও ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ বছরের খোরাকি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ব্রি ২৮ ধান আবাদ না করতে যে রকম প্রচার-প্রচারণার দরকার, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তেমন প্রচার হয়নি। ফলে কৃষক বারবার একই ভুল করে লোকসানের মুখে পড়ছেন।