মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘দেখা মাত্রই গুলি’র নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০২৩, ৮:৪৯:২৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: ভারতের মণিপুর রাজ্যে স্থানীয় আদিবাসী ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রতি চলা দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। দুই পক্ষের বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগে সৃষ্ট উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি ‘দেখা মাত্রই গুলি’র নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, রাজ্যের কয়েকটি বিধ্বস্ত গ্রাম থেকে অন্তত ৯ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আরো বহুসংখ্যক মানুষকে উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে সেখানে সেনাবাহিনী ও আসাম রাইফেলসের ‘৫৫ কলাম’ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ। খবর এএনআই ও দি ইকোনমিক টাইমস।
বনাঞ্চল ও জলাভূমির ওপর সেখানকার অধিবাসীদের অধিকার কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যটিতে আন্দোলন চলছিল। রাজ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে ‘অনৈতিক’ দাবি করে ও এর প্রতিবাদ জানিয়ে সংহতি মিছিলের ডাক দেয় রাজ্যের জনজাতি ছাত্র ইউনিয়ন (এটিএসইউএম)।
পাহাড়বেষ্টিত এ রাজ্যের প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তফসিলভুক্ত জাতির স্বীকৃতি না থাকায় সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার অনুমতি পায় না তারা। সম্প্রতি নিজেদের উপজাতি হিসেবে তফসিলভুক্ত করার দাবি তোলে মেইতেই সম্প্রদায়। কিন্তু সেখানকার তফসিলভুক্ত সম্প্রদায়গুলো একযোগে তার বিরোধিতা করে।
মণিপুর হাইকোর্ট সম্প্রতি মেইতেই সম্প্রদায়ের এ দাবি বিবেচনা করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। তার পরই নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় বিভিন্ন এলাকায়। বিক্ষোভে রাস্তায় নেমেছে সেখানকার তফসিলভুক্ত আদিবাসীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানোর পাশাপাশি ৮ জেলায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫ দিনের জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল, চূড়াচাঁদপুর ও কাংপোকপিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাতেই আধাসামরিক বাহিনী ও রাইফেলস সদস্যদের রাস্তায় নামায় রাজ্য প্রশাসন। বিভিন্ন সরকারি ভবন লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনীতি ও নির্বাচন অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু এখন প্রথম কাজ হলো মণিপুরকে রক্ষা করা। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মণিপুরকে দেখার আর্জি জানাচ্ছি। শান্তি ফেরানোর আহ্বান করছি।’
এর পাশাপাশি মণিপুরের বাসিন্দাদেরও শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘আজ যদি আমরা মনুষ্যত্বকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিই, তাহলে আগামীকাল মানুষও অবশিষ্ট থাকবে না।’
মণিপুরের পরিস্থিতির দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নজর দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। মণিপুরের অবস্থা ভুলে মোদি ও বিজেপি কর্ণাটকে ভোট জেতায় মগ্ন বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। এদিকে বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে বুহস্পতিবার মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এ বীরেন সিংয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।