সিলেটে ‘ধরপাকড়’ বিএনপিতে আতঙ্ক, ৪ দিনে গ্রেফতার ১৭
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৩, ৮:৫৫:১৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে সিটি নির্বাচনের আগেই শুরু হয়েছে ‘ধরপাকড়’। তল্লাশির নামে নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়ি গিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একের পর এক বিএনপি, ছাত্রদল ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ।
গত চার দিনে মহানগরের অন্তত ১৭ নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এ নিয়ে বিএনপিতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ এ ‘ধরপাকড়’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপির মনোনয়নে টানা দুইবার সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি হবেন না, তা স্পষ্ট করতে আগামী ২০ মে নগরীর রেজিস্ট্ররী মাঠে জনসভা ডেকেছেন। গত সোমবার আরিফুলের জনসভা ডাকার পর থেকেই মূলত চাপে পড়েছে বিএনপি। বেছে বেছে আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের একটি মিছিল থেকে ছাত্রদল ও যুবদলের ৮ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তারাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করার অভিযোগ এনে পুলিশ ওই রাতেই কোতোয়ালি থানায় মামলা করে। পরে এ মামলায় ওই ৮ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, গত চার দিনে ছাত্রদল ও যুবদলের ৮জন ছাড়াও বিএনপির আরো অন্তত ৯ নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। পরে বিভিন্ন পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এছাড়া গত মঙ্গলবার থেকে প্রতি রাতেই বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। তাই ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন।
সিলেট বিএনপির আরিফুলপন্থী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আরিফুল হক মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেতে পারেন বলে নগরে চাউর রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করার জন্য আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এই প্রক্রিয়ারই অংশ। শেষ পর্যন্ত আরিফুল প্রার্থী হলে যেন বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা তার পক্ষে কোনো কাজে অংশ নিতে না পারে, সে জন্যই ভয়ভীতি দেখানো চলছে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এরপরও সিটি নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে নতুন করে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরিফ ঘোষণা দিয়েছেন, ২০ মে সভা করে তিনি সিটি নির্বাচন নিয়ে নিজের মতামত জানাবেন। মূলত তার জনসভায় যেন মানুষ না হয়, সে জন্য পুলিশ আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে প্রতিহত করতেই পুলিশ হঠাৎ ধরপাকড় শুরু করেছে এবং নতুন করে মামলা দিচ্ছে। বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাবে না, এরপরও মেয়র পদে নিজেদের প্রার্থীর জয় শতভাগ সুনিশ্চিত করতেই সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি চালাচ্ছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ বাড়াতেই নতুন করে ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বেছে বেছে তার ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। এ চাপ ক্রমশ বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি।
তবে বিএনপির এ অভিযোগের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করেছেন মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার সুদীপ দাস। তিনি বলেন, পুরোনো মামলার পরোয়ানাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতার করছে। এটা পুলিশের রুটিনওয়ার্ক (নিয়মিত কাজ)। আর সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশ সদস্যদের মারপিট করার অভিযোগে গত মঙ্গলবার ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করছে না। বিএনপির অভিযোগ সত্য নয়।