মণিপুরে সংঘাতে নিহত বেড়ে ৫৪
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৩, ১০:০৯:৪১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় গত ৪ দিনের জাতিগত দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ জনে। মণিপুরে দাঙ্গা প্রশমণে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩ দিন রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মেইতেইদের সঙ্গে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নাগা-কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর যে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছে, তার মূল কেন্দ্র ছিল রাজধানী ইম্ফল। সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন শনিবার রাজধানী ইম্ফলের পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও রাজধানীর আশপাশ ও দূরবর্তী এলাকাগুলোতে এখনও সংঘাত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মণিপুরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তিন দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার সকালে ইম্ফলের বেশিরভাগ দোকান ও বাজার খুলেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারাও অন্যান্য দিনের মতো এ দিন সকাল থেকে নিত্যপ্রায়েজনীয় পণ্যদ্রব্য কেনা-বেচা করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, যে ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ পূর্ব ইম্ফলের জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস হাসাপতালের মর্গে এবং ১৬ জনের মৃতদেহ চারুচন্দ্রপুর জেলা হাসাপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বাকি ২৩ জনের মরদেহ রাখা হয়েছে পশ্চিম ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হাসপাতালের মর্গে।
এর বাইরে রাজ্যের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র পাহাড়ি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত চলছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের। গত চার দিনে এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫ জন সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন দুই জন সেনাসদস্য।
সংঘর্ষের শুরু যেভাবে : বিভিন্ন জনজাতি অধ্যূষিত রাজ্য মনিপুরের সংখ্যাগুরু জাতিগোষ্ঠী মেইতেই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের তফসিলি উপজাতি বা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বসবাস মূলত ইম্ফল উপত্যকায়। এদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করেন যে আদিবাসীরা, তাদের একটা বড় অংশ মূলত নাগা, কুকি, চিনসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষ।
মেইতেইরা যদি তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান, সেক্ষেত্রে রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন বঞ্চিত হবেন- এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল।
কিন্তু ৩ মে, মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে বলে। বুধবার হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরপরই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করে, আর সেই থেকেই সূত্রপাত এই জাতিগত দাঙ্গার।
মেইতেইরা মণিপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৪%। মণিপুর রাজ্য বিধানসভার ৬০টি আসনের ৪০টিই মেইতেইদের, যদিও তাদের বসবাস রাজ্যের মাত্র দশ শতাংশ জমিতে।
মেইতেইদের অধিকাংশই হিন্দু এবং একটা বড় সংখ্যায় বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী। তাদের মধ্যে কিছু মুসলমানও রয়েছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেইরা নিজ ধর্ম অনুসরণের পাশাপাশি চিরাচরিত প্রকৃতি পূজাও করে থাকেন।
অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী নাগা-কুকি-চিনসহ অন্যান্য উপজাতিদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। রাজ্যটির ৯০ শতাংশ ভূমিতে এরকম অন্তত ৩৩টি জনজাতিগোষ্ঠীর বাস।
বৃহস্পতিবার মণিপুরে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর ওইদিন রাতেই ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৫ ধারার আওতায় উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে বেশ কয়েক কোম্পানি রিজার্ভ সেনা পাঠায়।
৩৫৫ ধারার প্রয়োগ অনেকটা জরুরি অবস্থা জারির মতো। তবে ভারতের গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই ধারার প্রয়োগ খুবই বিরল।
মণিপুরের সহিংসতার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটকে তার নির্বাচনী প্রচার বাতিল করে সার্বিকপরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর অপর এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা জানান, গত তিন দিনে সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ১৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে আর্মি ক্যাম্পেও আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
‘দাঙ্গার শুরু থেকেই ইম্ফলের পূর্ব ও পশ্চিমাংশ উত্তপ্ত ছিল। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পর গত ১২ ঘণ্টা ধরে রাজধানীর পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত । এছাড়া রাজ্যের চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং ক্যাংপোকপি জেলার দাঙ্গা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে। সার্বিকভাবে, সেনাবাহিনী ও পুলিশ দৃঢ়ভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করছে,’ এনডিটিভিকে বলেন ওই কর্মকর্তা। সূত্র : এনডিটিভি