এক শিক্ষকে এক স্কুল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২৩, ৮:১৭:২২ অপরাহ্ন
হাওরে শিক্ষার হাল:
জালালাবাদ রিপোর্ট: হাওর মানেই শুকনায় দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তর আর বর্ষায় অবারিত জলরাশি। এখানে মানুষের জীবনাচার হাওরের প্রকৃতির সাথে মিশে একাকার। হাওরবাসীকে চলতে হয় হাওরের সাথে খাপ খাইয়ে। দুর্গম অঞ্চল, অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা আর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার সল্পতায় এখানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলোও তাই অনেকটা মিয়্রমান।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরপাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম দুর্লভপুর। এ গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়ানোর একটি মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রম এক হাতে সামলাতে হচ্ছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাথী রাণীকে।
বিদ্যালয়টিতে আর কোনো শিক্ষক না থাকায় পাঠদান থেকে শুরু করে দাপ্তরিক সকল কাজ একা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। একটি শ্রেণিতে পাঠদান করানোর সময় অন্য সব শ্রেণি কগুলো থাকে শিক্ষক শূন্য। সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে একের পর এক ক্লাস নিতে নিতে একটা সময় কান্ত হয়ে পড়েন তিনি। পাশাপাশি কোনো কারণে যদি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে না পারেন, বাধ্য হয়ে এদিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হয়।
একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী আরেক গ্রাম শরীফপুর রাধাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উৎপল কুমার ছাড়া আর কোনো শিক্ষক না থাকায় দু-তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে করে পাঠদান করেন তিনি। এতে ইচ্ছা থাকলেও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষকস্বল্পতায় কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয় দুটির ২০৩ জন শিক্ষার্থী। অথচ সম্প্রতি সুনামগঞ্জে ৭০০ নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও একজন শিক্ষকও দেওয়া হয়নি এই দুই বিদ্যালয়ে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার পরও কোনো সমাধান পাননি শিক্ষকরা।
শিক্ষক সাথী রাণি বলেন, দপ্তরী, সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক কেউ নাই আমার স্কুলে। সবকিছু আমার একা চালাতে হচ্ছে। একজন প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক অনেক কাজ। সেই কাজ সামলাতে পারি না, ক্লাস নেব কীভাবে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। ক্লাস করতে করতে আমি কান্ত হয়ে যাই। আমার মনে হচ্ছে আমি কিছুদিনের ভেতর অসুস্থ হয়ে যাব।
রাধাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উৎপল কুমার বলেন, ২০২০ সাল থেকে শিক্ষক হিসেবে আমি একাই স্কুলে আছি। সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে করে কাস করাতে হয়। না হলে আমি এক ক্লাসে গেলে অন্য ক্লাস ফাঁকা থাকে। যদি কোনো কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকি সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। স্যারেরা এখন পর্যন্ত শুধু শিক্ষক দিচ্ছি দিচ্ছি বলে আসছেন।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। তাই দ্রুত বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়ার দাবি অভিভাবকদের।
যার নামে বিদ্যালয় সেই রাধাচরণের ছেলে বিজয় তালুকদার বলেন, গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য বাবার নামে নিজেদের জায়গা দিয়ে দিয়েছি স্কুলকে। কিন্তু যে আশায় আমরা স্কুলের নামে জায়গা দিয়েছি সে আশা পূরণ হচ্ছে না। আমাদের স্কুলের শিক্ষক না থাকায়। একজন শিক্ষক কি করবে? শিক্ষক দিলে স্কুলের উন্নয়ন হবে গ্রামের উন্নয়ন হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, নতুন নিয়োগের পরেও উপজেলায় এখনো ৫৫টি শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। তাই শিক্ষক স্বল্পতা কাটানো যাচ্ছে না। তবে একজন করে শিক দিয়ে একটি বিদ্যালয় চলতে পারে না। তাই এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ডেপুটেশনে দ্রুত অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।