দুঃসহ গরমে বিদ্যুতের দুর্ভোগ : ১৩ মে’র আগে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৩, ১১:৪৫:২৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে জনজীবন। একদিকে বৈশাখের তপ্ত রোদ অন্যদিকে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। তার ওপর বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় নাজেহাল মানুষ। আগামী ১৩ মে’র আগে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। বরং তাপপ্রাবহের আরো বিস্তার ঘটার আভাস তাদের।
দিনভর উত্তাপ আর বয়ে যাওয়া গরম হাওয়ায় প্রায় সব জায়গার মানুষের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। দুপুর গড়াতেই প্রধান প্রধান সড়ক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একটু সুশীতল হাওয়ার পরশ পেতে মানুষ গাছপালা কিংবা ছায়ার নিচে থাকার চেষ্টা করছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সিলেট ও মৌলভীবাজারসহ দেশের ৪৩ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি মানের তাপপ্রবাহ বইছে। এক দিনের ব্যবধানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও অন্তত তিন দিন এমন গরম চলতে থাকবে। আর তাপপ্রবাহের পরিধি বিস্তৃত হতে পারে। এমন গরমের মধ্যেই আবার বঙ্গোপসাগরে দেখা দিয়েছে লঘুচাপ। এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সামান্য বিরতি দিয়ে রাজশাহীর তাপমাত্রা আবারও ৪০ ডিগ্রিতে উঠেছে। চুয়াডাঙ্গায় উঠেছে ৪১ ডিগ্রীতে। আর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রী। যদিও একুওয়েদার বলছে, সোমবার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছিল ৪৩ ডিগ্রীর মতো। সংস্থাটির আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অন্তত তিন কারণে এত গরম পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নামজুল হক বলেন, তিনটি কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এক, এপ্রিল ও মে মাস দেশের উষ্ণ মাস। গত এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এ দুই মাসের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখন গরম বেশি।
গরম হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো কম বৃষ্টি হওয়া। মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও গত দুই দিন বৃষ্টি একেবারেই কম। আর এ কারণে গরম বাড়ছে।
গরম বেড়ে যাওয়ার তৃতীয় কারণ হিসেবে নাজমুল হক সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কথা বলেন। তার মতে, এখন সাগর থেকে হাওয়া আসছে না; বরং ভূপৃষ্ঠের হাওয়া সাগরের দিকে ছুটছে। আর এ কারণে গরম বেশি।
সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসটি ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণ মাস। মাসটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ছিল ২ ডিগ্রি বেশি। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলেও দিনে গরমের কষ্ট কমেনি। বর্ষার আগের এই সময়ে এখন আবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে।
জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের গরম রীতিমতো আপদ (হ্যাজার্ড) থেকে দুর্যোগে রূপ নিচ্ছে। তারা বলছেন, অতি উষ্ণ তাপের মধ্যে কেউ যদি টানা ছয় ঘণ্টা থাকেন, তাহলে তাঁর শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, ফুসফুস ও যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। এমনকি হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে।
এদিকে, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর কারণে ভোগান্তি যেন আরো চরম আকার ধারণ করেছে। সিলেটে দিনে-রাতে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হয়। এমনকি মধ্যরাতে এবং ভোররাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। একবার লোডশেডিং হলে এক ঘণ্টার মধ্যেও বিদ্যুত ফিরে আসে না। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এই লোডশেডিং মানুষকে চরম দুর্ভোগে এনে দিয়েছে।
শহরের চেয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ। গ্রামাঞ্চলে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
সিলেটে পাঁচটি বিতরণ অঞ্চলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সব অঞ্চলেই লোডশেডিং এর নির্ধারিত সূচি রয়েছে। কিন্তু সূচির বাইরে লোডশেডিং অনেকটাই নিয়মে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের বরাবরের মতোই অভিযোগ, আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সোমবার দিনে সিলেটে চাহিদা ছিলো ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু বরাদ্দ ছিলো ১০১ মেগাওয়াট। তবে সিসিক নির্বাচনের কারণে অনুরোধ করে আরো ৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হয়। তাই বেলা ২টার পর লোডশেডিং এর মাত্রা কমে আসে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সিলেট, মৌলভীবাজার ছাড়াও রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘণীভূত হতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। লঘুচাপটি মধ্য বঙ্গোপসাগরে আসতে পারে ১২ বা ১৩ মে। সেসময় এর প্রভাবে বাংলাদেশে কিছু বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশে মে মাসে ২৭৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ধরা হয়।