সিলেটে ইভিএম চ্যালেঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২৩, ৫:২৭:৫৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আগামী সংসদ নির্বাচনের অর্ধেক আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছিল নির্বাচন কমিশন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে ইসি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ব্যালট পেপারে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে বাদ দিলেও ইভিএম চ্যালেঞ্জ নিয়েই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট সিটি নির্বাচন।
সিলেট সিটিতে ইভিএম’র সঙ্গে আগে তেমন পরিচয় ঘটেনি নগরবাসীর। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ যেমন আছে, পাশাপাশি সংশয়ও কাজ করছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মাঝেও নানা সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্নেরও উদ্রেক করেছে। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন যেখানে ব্যালটে হবে ; সেখানে ইভিএম কেন সিটি নির্বাচনে? তাদের মতে, ইভিএম-এ ভোট দিতে অনেকক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। ফিঙ্গার না মেলার কারণে অনেকেই আবার অপেক্ষা করতে করতে ভোট না দিয়েই চলে যান।
যদিও গত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মাত্র কেন্দ্রে ইভিএম-এ ভোট হয়েছিল। সেই ওয়ার্ডের দু’টি কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছিলেন বিএনপি’র প্রার্থী অরিফুল হক চৌধুরী। এর আগেরবার সিলেট নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। দুই সিটি নির্বাচনে মাত্র দুটি কেন্দ্রে ইভিএমে নির্বাচন হলেও ৯৯ ভাগ ভোটারই ভোট দেন ব্যালটে। এবার সম্পূর্ণ এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি ভোটাররা। তাদের সামনে প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনের ভোট ইভিএমে।
ইভিএম নিয়ে সবার আগেই বিভিন্ন বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যদিও তিনি সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না- এখনো সেটি খোলাসা করেননি। তবে ইভিএম নিয়ে তার সংশয় কাটছে না। তার মতে, ইভিএমে ভোটে কারচুপির আশঙ্কা থেকেই যায়। তিনি বলেছেন, সিলেটের ভোটাররা এখনো ইভিএম-এ ভোট দিতে অভ্যস্থ নন, এতে অনেক ভোটারই ভোট না-ও দিতে পারেন।
তবে বিপরীত কথা বলছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বলেছেন, আমিও তো আরিফুল হক চৌধুরীর মতো প্রার্থী। এ ব্যাপারে তো আমার কিছু বলার বা করার নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়, তারা কীভাবে ভোট গ্রহণ করবে, তাদের বিষয়। ইভিএমে আমাদের আপত্তি নাই।
ওদিকে, ইভিএম নিয়ে ভয় নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবুল বলেন, চুরি তো ব্যালটেও হয়। দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়। তাই ইভিএম নিয়ে আমার আলাদা কোন ভয় নেই।
সিলেটের নাগরিক সমাজের নেতারাও ভোটের পরিবেশের পাশাপাশি ইভিএম নিয়ে কথা বলছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ইভিএমের বিরোধী আমি নিজেও। যেখানে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বাতিল করা হয়েছে, সেখানে সিটি নির্বাচনে ইভিএম কেন। এ নিয়ে মানুষের মাঝে সংশয়ও আছে, আমার মাঝেও আছে। তিনি বলেন, এদেশে শিক্ষার হার এখনো শতভাগ নয়। সব মানুষ এখনো সচেতন নয়। এই মানুষগুলো ইভিএম কি জানে?
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর সিলেট জেলা সভাপতি লোকমান আহমদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ইভিএম পদ্ধতি কোন বিশ^াসযোগ্য পদ্ধতি নয়। এটি এখনো অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত। এখন পর্যন্ত মানুষ ইভিএমে অভ্যস্ত হতে পারেনি।
সিলেটের বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এডভোকেট আনসার খান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ভোটার সাধারণের কাছে যেটি গ্রহনযোগ্য নয়, সে ধরনের পদ্ধতিতে না যাওয়াই ভালো। বরং নির্বাচন ব্যালটে করাই শ্রেয়।
এদিকে, একাধিক জনপ্রতিনিধি ইভিএম নিয়ে তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের মতে, ইভিএম-এ ভোটগ্রহণের অভিজ্ঞতা তেমন ভালো নয়। ইভিএম-এ ভোট দিতে অনেকক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। ফিঙ্গার না মেলার কারণে অনেকেই আবার অপেক্ষা করতে করতে ভোট না দিয়ে চলে যান।
সিলেটের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন- বিগত জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে ইভিএম-এ ভোট দিয়েছিলেন সিলেট নগরের ভোটাররা। তবে অর্ধেক ভোটারই কেন্দ্রে যাননি।
এদিকে, এতসব প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়ার মাঝে মঙ্গলবার বরিশালে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হচ্ছে শতভাগ স্বচ্ছতার প্রতীক। ইভিএম দিয়ে কেউ কিছু করতে পারে, এই ভ্রান্ত ধারণা কেন বুঝতে পারছি না। এ পর্যন্ত ৭০০ নির্বাচনের মধ্যে ৬০০ নির্বাচন ইভিএমে হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। ব্যালটে অনিয়ম করার সুযোগ থাকলেও ইভিএমে সেটা সম্ভব নয়।
তবে পক্ষে বিপক্ষে সকল মত, নির্বাচন কমিশনারের দৃঢ়তা ও ইসির চ্যালেঞ্জসহ সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ২১ জুন। নগরবাসীতে অপেক্ষায় থাকতে হবে সেদিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। নগরে ওয়ার্ড আছে ৪২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। আগামী ২৩ মে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।