কাল থেকে ফের মাঠের কর্মসূচীতে বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৩, ১২:১৫:৫৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: চলমান সিটি নির্বাচনে নেতাকর্মীদের নিরুৎসাহিত করতে কঠোর বার্তা দিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে এই সময়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ফের নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ঈদুল ফিতরের পরে বেশ কিছুদিন চলে গেলেও কর্মসূচি না থাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মাঠে নামার পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তবে অনেকের ঢাকা অভিমুখে কর্মসূচির মতামত থাকলেও নেতারা এখনই ঢাকায় নয়, বরং তৃণমূল চাঙা করার জোর দিয়েছেন বেশী। সে আলোকে রাজধানী ঘিরে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার আগে ৬৪ জেলায় সমাবেশ করতে চান তারা। আগামীকাল শনিবার (১৩ মে) ঢাকায় দুই মহানগরের যৌথ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০ মে থেকে এসব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে ৪ পর্বে প্রতি শনিবার এ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতি পর্বে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ১৬টি করে সমাবেশ হবে। কোনো বিভাগে একই দিন ২ জেলায়ও সমাবেশ হতে পারে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশের আদলে এসব জেলা সমাবেশ করবেন বিএনপি ও আন্দোলনের সঙ্গীরা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দেশের বিরোধী দলগুলোর কোনো দাবি আমলে নিচ্ছে না। উপরন্তু নিত্যপণ্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সবদিক দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী ১৩ মে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। যতটুকু জানি সেই সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর থেকে ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত ঘুরেফিরে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা, সমাবেশ, গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি করেছে বিএনপি ও মিত্ররা।
বর্তমানে কিছুটা শিথিল আছে পরিস্থিতি। বিশেষ করে ঈদের পর থেকে সংবাদ সম্মেলন জাতীয় দৈনন্দিন কর্মকা-ের বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই বিএনপির। ফলে অনেকের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে কিনা। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন কবে থেকে আবার শুরু হবে রাজপথের কর্মসূচি। এসব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে বিএনপি মহাসচিবকে।
আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলন একটা ঢেউয়ের মতো। এটা কখনো ওঠে, কখনো নামে। জনগণের পরিপ্রেক্ষিত বুঝে আন্দোলনটা করতে হয়। যেমন রোজার মাসে মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। আন্দোলনের যারা অংশীদার আছেন, শরিক দলগুলো আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত আলোচনার পর্যায়ে এসেছি। শিগগির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তার এই বক্তব্যের পর গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পর বুধবার রাতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের এক বৈঠকে নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দুই বৈঠকেই ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অবশ্য এর আগে সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার কথায় আন্দোলনের ইঙ্গিত মিলেছে।
ঈদের পরে কর্মসূচি না থাকার বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে খালেদা জিয়াও কথা বলেছেন বলে জানান মান্না। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী বলেছেন, এটা ঠিক হাতে সময় নেই। চূড়ান্ত আন্দোলনের বিষয়ে সিরিয়াস হতে হবে। সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না
বিএনপি নেতারা বলছেন, যুগপতের নতুন কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশে শোডাউন করতে চান তারা। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যেমন চাঙা হবেন, তেমনি নিজেদের শক্তিমত্তা, সরকারের মনোভাবও তারা বুঝতে পারবেন।
অবশ্য নির্বিঘ্নে সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে এমনটা নীতিনির্ধারকরাও ভাবছেন না।
অন্যদিকে ঢাকাকে ঘিরে কর্মসূচি দিতে গেলে সরকারের বড় চাপের মুখে পড়তে হবে এমন আশঙ্কাও আছে বিএনপিতে। ফলে চূড়ান্ত আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরির আগে শক্তি ক্ষয় করতে নারাজ নীতিনির্ধারকরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের প্রতিটি সমাবেশে সাংগঠনিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সব জেলা থেকে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে ফের শোডাউন করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
জানা গেছে, দুই দফা বৈঠকে সব জেলায় সমাবেশ করার পক্ষে মত দেন নেতারা। সবার মতামতের ভিত্তিতে ৬৪ জেলাতেই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপি নেতাদের ভাবনা, জেলায় জেলায় বড় ধরণের শোডাউন করা গেলে সরকারও তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আর লম্বা সময় ধরে কর্মসূচি দিলে তা ঈদুল আজহা পর্যন্ত টেনে নেওয়া সম্ভব হবে। এতে পুরো সময় নেতাকর্মীরা চাঙা থাকবেন।
জানা গেছে, নেতারা কুরবানির ঈদের পর রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচির দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। সেক্ষেত্রে ঢাকা ঘেরাও, ঢাকামুখী রোডমার্চ, ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি হতে পারে। তবে আপাতত জেলা পর্যায়ের সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
শনিবার ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপি মহাসচিব।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারাদেশ জুড়েই কর্মসূচি থাকবে। তবে কবে কখন কি কর্মসূচি হবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
এদিকে বুধবার দিবাগত রাতে সিলেট মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে ভার্চুয়ালী মিটিং করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশ না নিতে কঠোর নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান। প্রয়োজনে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নগর বিএনপি নেতাদের নির্দেশনা দেন তিনি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচন বাদ দিয়ে তৃণমূল বিএনপিকে আন্দোলনমূখী করার দিকে জোর দিচ্ছে বিএনপি।