এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা: ৩ সমুদ্রবন্দরে মহাবিপদসংকেত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২৩, ৫:৪৩:০৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় এই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে পারে। আর আগামীকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এটি কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল শুক্রবার রাত নয়টায় এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখাতে বলেছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা জেলা ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি এই দুই জেলার কাছাকাছি যেসব দ্বীপ ও চর রয়েছে, সেসব দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার অংশ হিসেবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় ১০ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল সকাল থেকে কয়েক শ মানুষ কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল রাত ১১টা থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর ফলে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে আজ গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১২ নম্বর) বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর আগে আজ সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব দেখা যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা এবং এসব জেলার কাছাকাছি দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।