নালা যেনো ‘ডাস্টবিন’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২৩, ৩:০০:৫১ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল: নগরীর বড়ো বড়ো নালা-খাল অনেকটা আবর্জনা মুক্ত থাকলেও ছোটো ছোটো নালাগুলো ময়লায় পরিপূর্ণ। মাঝেমধ্যে রাস্তার পাশের ছোটো ড্রেনগুলো পরিষ্কার করলেও বিভিন্ন দালানের পেছনে বা আড়ালে থাকা শাখা ড্রেনগুলোতে ময়লার স্তুপ জমা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব নালায় বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে অসচেতন লোকজন অহরহ ময়লা ফেলছেন। একদিকে ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে না, অন্যদিকে লোকজনের ফেলা ময়লার স্তুপ জমে নালাগুলো যেনো অঘোষিত ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। যে ড্রেনগুলো মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করা হয় সেগুলো ড্রেনের পাশে বা স্লেভের উপরই ময়লা রেখে দেওয়া হয় কয়েকদিন। সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে না যাওয়ায় এসব ময়লার বড়ো একটা অংশ আবার ড্রেনেই চলে যায়। প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লার ড্রেনগুলোর এখন এই চিত্র। এতে দুর্গন্ধের সাথে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনগণ। কয়েল, এরোসল কিছুই মানছেনা মশা। এমতাবস্থায় রাতে ঘুমানোর জন্য মশারির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই গরমে মশারি টানিয়ে শোয়াও বিরক্তিকর। অনেক এলাকায় লোকজন অভিযোগ করেছেন, কাউন্সিলররা এক্ষেত্রে উদাসিন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এলাকাগুলো অভিভাবকহীন।
ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ছাড়ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, এর প্রভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সামনেই আসছে বর্ষার মৌসুম। ফলে ময়লায় পূর্ণ ড্রেনের সাথে বৃষ্টিতে বাসাবাড়িতে পানি ওঠা নিয়ে চিন্তিত এসব এলাকার মানুষ। কেননা অল্প বৃষ্টিতে নগরীর রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে পানি ওঠা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে নালা-ছড়া উপচে রাস্তায় পানি উঠে আসে। এরসাথে আসে ময়লা আবর্জনা স্তুপ। বৃষ্টি থামলে পানি নেমে গেলেও বিভিন্ন বাসাবাড়ির উঠোন ও রাস্তায় পড়ে থাকে ড্রেন থেকে উঠে আসা ময়লা কাদা ও বিভিন্ন আবর্জনা। এসব আবর্জনায় আশপাশ নোংরা হওয়ার পাশাপাশি ছড়ায় দুর্গন্ধ। ড্রেনে ময়লার স্তুপের কারণ পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বর্ষায় ভয়ানক দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন নগরীর দাড়িয়াপাড়া, জল্লারপার, জামতলা, লামাবাজার, ভাতালিয়া, নোয়াপাড়া, তলতলাসহ

দাড়িয়াপাড়া রসময় স্কুলের সামনে শনিবার দুপুর
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকায় ড্রেনে ময়লার স্তুপ। বড়ো বড়ো ড্রেনগুলো পরিষ্কার থাকলেও মুখে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে আছে ছোটো ছোটো ড্রেনগুলো। ড্রেনের অনেকটাই ময়লা আবর্জনায় ঢেকে আছে। এসব ড্রেনগুলোর একটি জামতলা এলাকায়। জল্লারপার থেকে তালতলা বের হতে জামতলা রোডে বামে পড়ে এই ড্রেন। শনিবার বিকেলে দেখা যায় এই ড্রেনের জল্লারপার রোডের মুখে ময়লার স্তুপ জমে আছে। বদ্ধ পানিতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আশপাশের বাসাবাড়ি থেকে ফেলা পলিথিনের ব্যাগে ময়লার পুটলা, জুসের প্যাকেট, ফলের খোসা, নারকেলের ছোবড়া পড়ে আছে ড্রেনে, মনে হয় যেনো কতদিন পরিচ্ছন্ন কর্মীর হাত লাগেনি এই ড্রেনে।
এদিকে দাড়িয়াপাড়ায় রসময় স্কুলের সামনে দেখা যায় স্লেভের উপর ময়লার স্তুপ। ড্রেনের পরিষ্কার করা ময়লা আর আশপাশের বাসাবাড়ির আবর্জনায় এখানে টিলার মতো স্তুপ হয়ে আছে। একটি বিদ্যালয়ের সামনে এভাবে ময়লার স্তুপে বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকে। এই রোডের মুখেই পাঁচভাই এবং পানসী রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টের তরল বর্জ আর চর্বি এসে ড্রেনে জমে শক্ত পাথরের মতো হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন এক দোকানদার। তিনি বলেন, এতে ড্রেনের গভীরতা কমে যায়, তেল চর্বির ময়লা জমে পানিপ্রবাহ প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। এতে অল্প বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে যায়। আমরা ব্যবসা বর্ণিজ্য নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
অনেক এলাকাবাসী বলেন, আমরা মাঝেমধ্যে সিটিতে অভিযোগ করি। অভিযোগ করলে লোক এসে পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। কিন্তু এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে নিয়মিত করা উচিত। তাছাড়া মানুষেরও সচেতন হওয়া উচিত, মানুষ ডাস্টবিনে ফেলার ময়লা যদি ড্রেনে ফেলে তাহলে ড্রেন পরিষ্কার করে লাভ কতটুকু হবে। তাই এসব এলাকায় ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা দরকার। ডাস্টবিন না থাকায় মানুষ মাসোয়ারা বেতনে থাকা ভ্যানে ময়লা দেন, যারা বাসা থেকে ময়লা নিয়ে যায়। কিন্তু এখানে যারা ময়লা নেয় তারা সবধরনের ময়লা নেয় না। শুধু পলিথিনে বাধা তরকারি ময়লা আর কাগজ নেয়, অন্যগুলো ফেলে যায়। এতে লোকজন বাধ্য হয়ে ড্রেনে এসব বর্জ ফেলে। বাসাবাড়ি থেকে যাতে সব ধরনের ময়লা সঠিকভাবে পিকআপ হয় সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম বলেন, লোকজনকে আমরা বলি তবুও খোলা ড্রেন পেলে অনেকে অসচেতনভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে দেন। তিনি বলেন জামতলার রাস্তায় নতুন করে ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে, অল্পকিছু কাজ বাকি আছে। নির্মাণ কাজের জন্য ড্রেনে বাঁধ দিয়ে করতে হচ্ছে, এজন্য ড্রেনের মুখে পানি বদ্ধ আছে। শ্রীঘ্রি কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে পানি দ্রুত সরে যেতে পারবে। নির্মাণ কাজের জন্য সাময়িকভাবে এই অসুবিধা হচ্ছে।