ভয়ঙ্কর রূপে মোখা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২৩, ৩:০৪:৪২ অপরাহ্ন
আজ হানবে আঘাত, গতি ১৯০ কি.মি.
১০ নম্বর মহা বিপদসংকেত
সিলেটে অতি ভারী বর্ষণের আভাস
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলের দিকে থেকে দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। যা ইতিমধ্যেই শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হয়েছে মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। শনিবার রাতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের আরও কাছাকাছি চলে আসে ঘূর্ণিঝড়টি। ক্রমেই বেড়েছে এর গতিবেগ। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৯০ কিলোমিটার। এজন্য দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে মহাবিপদসংকেত দেখানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধস ও জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতির রেকর্ডও হতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘূর্ণিঝড়টি আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে। আজ সকাল থেকেই উপকূল স্পর্শ করতে থাকবে।
ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মোখা ৪৫০ কিলোমিটারজুড়ে তাণ্ডব চালাতে পারে। কেননা, এটির ব্যাস ৪৫০ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে মোখা মিয়ানমার উপকূলেই প্রথম আঘাত হানতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে না। এটি অতিপ্রবল বা ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে আঘাত হানবে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এজন্য কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি ঝরাবে। দেশের তিন বিভাগ-চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে এ বৃষ্টি হবে। সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ হতে পারে অতিভারী (২৮৯ মিলিমিটার)। বৃষ্টির কারণে দেশের পাঁচ জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের স্থানীয় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সৈকতে পর্যটকদের সেবায় থাকা কিটকট (চেয়ার-ছাতা), বিচ বাইক, ঘোড়াসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে পুরো সৈকত এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। ফাঁকা সৈকতে বিজিবি ছাড়াও হাতমাইকে প্রচারণা চালাচ্ছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ছয়টি শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ও সমমানের আজ রোববার (১৪ মে) ও কাল সোমবারের (১৫ মে) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। যে ছয়টি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো হলো চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা ও যশোর এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। তবে অন্য শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা হবে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ উঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিমানবন্দরে সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। আগেই বাতিল করা হয়েছে শনিবারের সব ফ্লাইটের শিডিউলও। ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তা জানার পর ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, মহাবিপদসংকেত পেয়ে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে (ঘাটে) ফিরেছে। ট্রলার মালিক সমিতির দাবি, শনিবার সকালের মধ্যে ৪ হাজার ৩০০টি ট্রলার ঘাটে পৌঁছে। আরও চার শতাধিক ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি আছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলার কক্সবাজার শহর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার আছে ৫ হাজার ১১৩টি। এসব ট্রলারে ১ লাখের বেশি জেলে-শ্রমিক থাকলেও তার মধ্যে মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৬৪।