পিয়াজে অস্থিরতা চলছেই : কাচামরিচের ডাবল সেঞ্চুরী!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২৩, ১২:১০:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে পিয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। ২ সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আরো বাড়ার ইঙ্গিত ব্যবসায়ীদের। এদিকে সিলেটের বাজারে উর্ধ্বমূখী সবজির দাম। কাঁচামরিচের কেজি ডাবল সেঞ্চুরী অর্থাৎ ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেটে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া পিয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০-৭৫ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। অন্যদিকে কাঁচা বাজারেও বেড়েছে অস্বস্তি। কাঁচামরিচের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
পিয়াজ-সবজিসহ নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। নতুন করে ভোগান্তি বেড়েছে সীমিত আয়ের লোকদের। বাজারে অতিরিক্ত চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, সয়াবিন তেল, পিয়াজ-রসুন ও আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এ ছাড়া বাজারে এক মাসের ব্যবধানে চিনির কেজি ১১৫ থেকে বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুম ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পিয়াজের বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। পিয়াজের দাম এখন যেভাবে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির সুযোগ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এদিকে কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় কৃষিসচিব এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সবসময় মনিটর করছি। এই মুহূর্তে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি। কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। সভায় পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে পিয়াজের দাম ৭৮ শতাংশ বেশি। টিসিবি’র হিসেবে খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৬ টাকা কেজি। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, পিয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও দেশের চাহিদা পূরণ করার মতো পিয়াজ রয়েছে। এবার পিয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ লাখ টন, তবে উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের কিছু বেশি। তবে এতেই বছরের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। আমদানির প্রয়োজন হবে না।
এদিকে রোববার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব সবজির দামই চড়া। ২০-৩০ টাকা করে প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে। ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, ৪০ টাকার ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ৩০ টাকার বেগুন ৬০, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, মুকি ১০০ টাকা এবং শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গাজর প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে ফার্মের মুরগির লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। সাদা ডিমের দাম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২০০ থেকে ২১০ টাকা। আর হাঁসের ডিমের দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ডজন।
এদিকে দাম বাড়ানোর পরও কাটছে না চিনির সংকট। গত বৃহস্পতিবার খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হবে ১২০ টাকায়, আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হবে প্রতি কেজি ১২৫ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, চিনির দাম বাড়ানোর ফলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন দোকানে চিনি প্রতিকেজি ১৩৫-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি হলেও সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে।
ঠিক এক সপ্তাহ আগেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৮৭ টাকা। তবে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি সবখানে। কিন্তু পুরনো দাম লেখা মোড়কের বোতলও বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মোড়কে দাম ১৮৭ টাকা লেখা, অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়।
নগরীর সাগরদিঘীর পাড় এলাকার শ্রমজীবি রিক্সা চালক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, আয় রোজগার তো বাড়ছেইন বরং কমছে। এরমধ্যে বাজারে সবকিছু অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। যেমন কয়েকদিন আগে চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যেই কিনেছি। এখন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা গরীবরা যাব কই। আমাদের দেখার কেউ নেই।