এবার কলঙ্ক মুছতে চায় আওয়ামী লীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৩, ৬:০২:১৯ অপরাহ্ন
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন
এ টি এম তুরাব :
১৮৭৮ সালে সিলেট পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর ২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের চার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’বার করে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বিএনপি বিজয়ী হয়েছে। জোট সরকারের আমলেও বিজয়ের মুখ দেখেনি। আর নিজ দলের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও টানা দু’বার আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। তবে এবার সেই কলঙ্ক মুছতে চায় দলটি।
সামনেই নির্বাচন। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। একেবারেই নতুন মুখ। তবে এবার পরাজয় আর মেনে নিতে রাজি নয় দলটি। হারানো আসন পুনরুদ্ধারের শপথ দলের নেতাকর্মীদের। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অতীতের চারটি সিটি নির্বাচনের ফলাফল। চলছে হিসাব-নিকাশ। কারণ এবার বেড়েছে নগরীর এলাকা। বেড়েছে ভোটার সংখ্যাও। এবার নগর ভবনের হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ।
লক্ষ্য অর্জনে একক দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর মনোনয়ন বঞ্চিতদের দিয়েই গঠন করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে সবাই মাঠে। অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব-গ্রæপিং দূর করে একাট্টা করার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগ পরিবারকে। মাঠে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, প্রচারণা অব্যাহত। কেন্দ্রের নেতারাও ঘন ঘন সিলেট সফর করছেন।
মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এবার নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না। বিরোধীরা এমন আভাস পেয়েই নির্বাচন ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছেন। এমনকি নির্বাচনি পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টাও করছেন। তবে নগরবাসী পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়ে ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।
অপরদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থিতার ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। তবে জনশ্রুত রয়েছে, প্রার্থিতার ব্যাপারে অনুসারী, সমর্থক, ভোটারদের হ্যাঁ আর দলের পক্ষ থেকে না-এতেই তিনি আটকে আছেন। মেয়র আরিফ জানালেন, নির্বাচনমুখী, নাকি রাজনীতিমুখী তা ২০ মে জানাব।
প্রার্থীতার ব্যাপারে ঘোষণা না দিলেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মতোই তিনিও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দিন-রাত গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষ করে নগরীর নতুন ওয়ার্ডগুলোতে। তার এ তৎপরতা নির্বাচনমুখী বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে তার দলীয়, নির্দলীয় অনুসারীরা আছেন ভোটের সমীকরণে। হিসাব-নিকাশে আছেন মেয়র আরিফ নিজেও। তিনি বলেন, সিটির আওতায় যেসব এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অসুস্থতায় আমি তাদের কাছে যেতে পারিনি। সুস্থ হওয়ার পর যাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি প্রার্থী হওয়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি সম্মানের সঙ্গে সর্বাগ্রে বিবেচনা করছি।
মেয়র পদে শেষ দু’বার হেরে গেলেও এবার আমরা বিজয় চাই বললেন নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিলেট সিটি কপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। নির্বাচনে গতবার ১২০টি কেন্দ্র থাকলেও এবার কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ১৯০টি।
এদিকে সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ও প্রতীক বরাদ্দের আগেই সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আগেভাগেই প্রচার শুরু করেন। তারা সভা, কুশল বিনিময় ও জুমার নামাজে অংশ নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণাও চালাচ্ছেন। কোনো প্রার্থী প্রকাশ্যে মতবিনিময় সভা করছেন। এসব অনুষ্ঠানে তারা নির্বাচনি প্রতিশ্রæতিও দিয়েছেন। ২১ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১ জুন। এরপর শুরু হবে প্রচারণা।