হাওরাঞ্চলে ধান সংগ্রহে ধীরগতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৩, ১:০০:১১ অপরাহ্ন
৮দিনে সংগ্রহ ২৬৬ মে. টন ধান, ৮৩৩ মে. টন চাল
এমজেএইচ জামিল : সরকারীভাবে ধান-চাল সংগ্রহ উদ্বোধনের ৮দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়নি সংগ্রহ কার্যক্রম। এমনকি এখন পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে ধান বিক্রয়কারী কৃষকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সম্পাদন করতে পারেনি জেলা খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। এদিকে ধান সংগ্রহে ধীরগতির মাঝে প্রকৃত কৃষক বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮দিনে জেলায় শুধু ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৬৬ মেট্রিক টন। যদিও এবার সরকারী গুদামে ধান দিতে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো মওসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় সরকারীভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন এবং চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ধানের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হয় ৩০ টাকা কেজি। একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি এবং সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান বিক্রয় করতে পারবেন। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় অনলাইনে এবং ৫টি উপজেলায় অফলাইনে আবেদনের পর লটারী অনুষ্ঠিত হয়। লটারিতে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান চাল সংগ্রহ করে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কিছু উপজেলায় লটারী অনুষ্ঠিত হওয়া কৃষকগণ ধান দেয়া শুরু করেছেন। আজকালের মধ্যে জেলার সকল উপজেলায় একযুগে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলায় গত ৭ মে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ভার্চুয়ালীভাবে ধান ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে ১২ উপজেলায় ধান সংগ্রহ কার্যক্রম থমকে আছে। ফলে কৃষকরা কম দামে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রয় করে আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এবার বোরো মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন ধানের উৎপাদন হয়েছে। সরকার কিনবে মাত্র ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান। সরকারীভাবে ধান কেনার উপর নির্ভর করে বাজারে ধানের দাম। সরকারী দাম নির্ধারণ হলে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। কিন্তু এখনো সরকারীভাবে পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় ফঁড়িয়াদের কাছে কম দামেই ধান বিক্রি করছেন কৃষক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে জেলার ৭ উপজেলা শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, দিরাই, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুরে কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের আবেদন নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় লটারীও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া জেলার ৫টি উপজেলা বিশ^ম্ভরপুর, জগন্নাথপুর, শাল্লা, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় অফলাইনে কৃষকদের আবেদন নেয়া হয়। ইতোমধ্যে এসব উপজেলার মধ্যে কয়েকটিতে লটারী অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে বাকী উপজেলাগুলোতেও লটারী অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পুরো জেলাজুড়ে পুরোদমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা গেছে, জেলার তাহিরপুরে ১০৭৬, জামালগঞ্জে ১৩০৯, দিরাইয়ে ৮২২, ছাতকে ১০৮, দোয়ারাবাজারে ৩৮৪, সুনামগঞ্জ সদরে ৮৩৩ জন এবং শান্তিগঞ্জে ১৮০০ কৃষক আবেদন করেন। এরমধ্যে লটারীতে সদরে ৪১৩ জন ও শান্তিগঞ্জে ৬০০ জন কৃষক ধান দেয়ার জন্য মনোনীত হয়েছেন।
কৃষকরা জানান, কৃষিঅ্যাপে ধান বিক্রির আবেদনকে ঝামেলা মনে করেন কৃষকরা। এজন্য বাম্পার ফলনের পরও কৃষকরা এবারও গোদামমুখী হচ্ছেন না। ১২শ’ টাকার ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা মণে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করছেন। অনেক কৃষক নিবন্ধনকার্ড করার পর পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন। আবেদনে দেওয়া মোবাইল নম্বরও ভুলে গেছেন কেউ কেউ। কারো সিম নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তুলতে পারেন নি। সিম কার নামে রেজিষ্ট্রশন সেটাও জানেন না কেউ কেউ। এ কারণেও অনেক কৃষক উচ্চ মূল্য পাওয়ার পরও সরকারী গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নয়। খাদ্য গোদামে এসব সমস্যা নিয়ে কৃষকরা গেলে, কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইল নম্বর সঠিক না হলে কিছুই করার নেই। এক কৃষকের বা এক ভোটার আইডি কার্ডে দুইবার অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে না। এতে সরকারী গুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় পৌঁনে ৪ লাখ কৃষক থাকলেও অনেকের কৃষিঅ্যাপে নিবন্ধন নেই। জেলা খাদ্য অফিসের দেওয়া তথ্য মোতাবেক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় নিবন্ধনকৃত ৩ হাজার ৭৬১ কৃষকের মধ্যে ৭৯৬, তাহিরপুরে ২ হাজার ৭৮৯ কৃষকের মধ্যে ১ হাজার ৭৬, জামালগঞ্জের ৮ হাজার ৫৭৬ কৃষকের ১ হাজার ৩০৯, দিরাইয়ের ২ হাজার ৬৮৬ কৃষকের মধ্যে ৮২২, ছাতকে ২৮৯ কৃষকের মধ্যে ১০৮, দোয়ারাবাজারে ৪৭৯ জন নিবন্ধনকৃত কৃষকের মধ্যে ৩৮৪ জন ও শান্তিগঞ্জে ১৮০০ জন কৃষক ধান বিক্রি করতে আবেদন করেছেন।
এদিকে জগন্নাথপুরে মাত্র ১৫৪৮ জন কৃষক সনাতন পদ্ধতিতে ধান কেনার আবেদন করেছেন। লটারীতে নির্বাচিত হয়েছেন ৫১৮ জন। শাল্লায় আবেদনকারী ১১৩৯ কৃষকের সকলেই ধান দিতে পারবেন। ধর্মপাশায় ১৪ হাজার ৮৮৯ কৃষক ধান বিক্রির জন্য আবেদন করেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ভূঞা দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ধান চাল কিনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে জেলার অধিকাংশ উপজেলায় আবেদনের পর লটারীও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু হবে। আমরা আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। এরপর খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর আবারো ধান চাল বিক্রি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে পারে।
তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ২৬৬ মেট্রিক টন ধান ও ৮৩৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার সরকারী গুদামে ধান দিতে কৃষকের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ধান দিতে ১৮০০ কৃষক অনলাইন অ্যাপে আবেদন করেন। লটারীতে নির্বাচিত হন ৬০০ জন। এভাবে সকল উপজেলায় অতীতের ন্যায় ধান দিতে কৃষকরা বেশী আগ্রহী।