তুরস্কে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ মে : পাল্লা ভারী এরদোগানের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৩, ৮:০৯:১৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ২৮ মে তুরস্কে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও কেমাল কিলিচদারওলুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এরপর কী হতে পারে তার কিছুটা ধারণা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
প্রথম দফার নির্বাচনে কিলিচদারওলুর চেয়ে ৫ শতাংশ ভোটে এগিয়ে ছিলেন এরদোগান। সংখ্যার হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্ধির চেয়ে ২৫ লাখ ভোট বেশী পেয়েছেন। বিশ্লেষকেরা আভাস দিয়েছেন, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, তার পাল্লাও ভারী।
তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিলের ফলাফলকে উদ্ধৃত করে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেত ইয়েনের বলেন, প্রথম দফায় ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫১ ভোট পেয়েছেন। আর কিলিচদারওলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট।
সব মিলিয়ে এরদোগান প্রত্যাশার তুলনায় ভালো করেছেন। ৬০০ আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনেও তার নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি কারকোলু আল-জাজিরাকে বলেন, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কিছুটা সমর্থন হারালেও এরদোয়ান তার শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আনাতোলিয়া অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে সমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বড় শহরগুলোতেও কিছুটা নির্ভরযোগ্য মাত্রার সমর্থন ধরে রেখেছেন তিনি।
আলি কারকোলু আরও বলেন, ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলগুলোতেও তিনি (এরদোগান) খুব সফল হয়েছেন। কেউ কেউ এতে চমকে গেছেন, তবে তিনি তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। সামনে আরও ভালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যে বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্য কিলিচদারওলুর ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কিলিচদারওলু ভুল প্রার্থী। কারণ তিনি রক্ষণশীল ভোটারদের টানতে পারেননি।
প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী সিনান ওগানও নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল করেছেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে এরদোগান নাকি কিলিচদারওলু জয়ী, তা নির্ধারণে সিনান ওগানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। দুই প্রার্থীর মধ্যে তিনি কাকে সমর্থন দিচ্ছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
সিনান ওগান এখনো কারও জন্য সমর্থন ঘোষণা করেননি। ড্রাগোমান স্ট্র্যাটেজিসের বিশ্লেষক ওনুর এরিম আল-জাজিরাকে বলেন, এরদোগান কিংবা কিলিচদারওলুকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সিনান ওগান শর্ত বেঁধে দিতে পারেন। স্বীকৃতির বিনিময়ে তিনি মন্ত্রণালয় কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব চাইতে পারেন।
বিরোধী জোটের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো কী : কিলিচদারওলুর সঙ্গে কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) জোট করা নিয়ে জনগণের যে অংশটি প্রশ্ন তুলেছে, এখন তাদের দুয়ারে যেতে হবে। তবে কাজটা চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) রাজনৈতিক শাখা হিসেবে বিবেচনা করে তুর্কি সরকার। এরদোগান ইতিমধ্যে বিরোধী জোটকে পিকেকে ঘনিষ্ঠ উল্লেখ করে প্রচারণা চালিয়েছেন।
এরদোগান জয়ী হলে কী হবে : দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে এরদোগান জয়ী হয়ে তিনি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসীন হবেন। তুরস্কের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক হিসেবে তার অবস্থান বজায় থাকবে। তার অধীন তুরস্কে ২০১৮ সালে গৃহীত প্রেসিডেন্টশাসিত শাসনব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
জীবনযাপনের খরচ বাড়া জনিত চাপ থেকে মানুষকে স্বস্তি দিতে এরদোগান সরকার জ্বালানি বিলে ভর্তুকি, অবসর ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া, সরকারি কর্মীদের বেতন এবং ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ বাড়াবে। পাশাপাশি তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তিনি মুনাফার হারও কমিয়ে দেবেন।
এরদোগান আরও বলেছেন, তিনি একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিমালা প্রণয়ন করবেন, যা আঞ্চলিক, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর ওপর প্রভাব বজায় রাখবে।
তবে এরদোগানের সমালোচকেরা বলছেন, এ নেতা তার দুই দশকের শাসনক্ষমতার শেষ দশকে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর ওপর ধরপাকড় চালানো হয়েছে।
কিলিচদারওলু জয়ী হলে কী হবে : দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যদি কিলিচদারওলু জয়ী হন, তবে বোঝা যাবে ভোটারদের একটা বড় অংশ পরিবর্তন চান। মধ্যপন্থী নেতা কিলিচদারওলু তুরস্কে ‘দৃঢ় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা’ ফিরিয়ে আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি ‘কুর্দি ইস্যু’-এর সমাধান, সিরীয় শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।