ছাতকে গাছে-গাছে ঝুলছে রসালো লিচু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৩, ৮:২৯:০৩ অপরাহ্ন
আমিনুল ইসলাম হিরন, ছাতক: ছাতক-দোয়ারাবাজারে চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাগানে লিচুর ফলন কম হয়েছে। বর্তমানে টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চলের লিচু বাগানের গাছে গাছে এখন ঝুলছে মৌসুমী রসালো ফল লিচুর ছড়া। চলতি মৌসুমে এখানকার চাষীরা লিচু বিক্রি করে লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করবেন বলে জানান এই এলাকার একাধিক লিচু চাষী।
ছাতকসহ দোয়ারাবাজারের কিছু গ্রামে ২০-২২ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ করা হয়। ছাতক-দোয়ারাবাজারের লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে খুব কম বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর চাহিদা ব্যাপক। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু দিয়েই ছাতক-দোয়ারাবাজারের মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। গত কয়েক দিন ধরে ছাতক-দোয়ারাবাজারসহ স্থানীয় হাট বাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচুর বিক্রি শুরু হয়েছে। ছাতকসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাটে এখানের উৎপাদিত লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হয় প্রতিদিন। বর্তমানে হাটে এ অঞ্চলের উৎপাদিত ১০০ লিচু ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চাঁনপুর, বড়গল্লা, রাজারগাঁও এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া ও টেংরাটিলায় রয়েছে লিচুর বাগান। এখানের উৎপাদিত লিচু আকারে ছোট হলেও এ লিচু খুবই মিষ্ট। লিচু চাষী মানিকপুর গ্রামের আরব আলী, গোদাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির, আব্দুল মমিন, রাজারগাও গ্রামের আব্দুল মানিক, চাঁনপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, লাভজনক লিচু চাষের সাথে জড়িয়ে তারাসহ এখানের শতাধিক লিচু চাষী এখন স্বাবলম্বী। লিচুর বাজারমূল্য সব সময়ই ভালো থাকে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়নি। খরার কারণে লিচুর মুকুল ঝরে পড়ায় ফলন অনেকটা কম হয়েছে। এদিকে ছাতক-সিলেট রেলপথ বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখানের উৎপাদিত লিচুও পাঠাতে পারছেন না বলে জানান তারা।
ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর গ্রাম। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার। বর্তমান সময়ে ছাতক-দোয়ারাবাজারের এই এলাকার বাগানগুলোতে দেশীয় জাতের পাকা রসালো ফল লিচুর ছড়া গাছে-গাছে ঝুলছে। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। লিচু বাগান দেখতে আসা এখানে দর্শনার্থীদের ভীড়ও কম নয়। লিচু চাষী গোদাবাড়ি গ্রমের আবদুল বারী, মানিকপুর গ্রামের শওকত আলী জানান, চারা রোপনের তিন বছরের মধ্যে লিচু ধরা শুরু হয়। একটি বড় লিচু গাছের লিচু বিক্রি করে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
স্থানীয়রা জানান, গত ক’বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশী লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সরকারি সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (অবঃ) মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ জানান, লিচু চাষীদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। তাদের সরকারি সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে চাষীরা পাচ্ছেন ভালো বাজার মূল্য। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।