শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন ডলার
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৩, ৮:১৬:২২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছিলেন মার্কিন ডলারের ক্রমাগত মূল্যহ্রাসের বিষয়টি। অথচ গত মাসে মার্কিন ডলারের মূল্য বেড়েছে ২ শতাংশ। তাহলে কি আবার শক্তিশালী হচ্ছে গ্রিনব্যাক? এ নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, মার্কিন মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত অবস্থার আভাস দিচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ আগামী মাসে সুদহার বৃদ্ধিরও লাগাম টানতে পারে। খবর রয়টার্স।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে সম্ভবত অনেক কারণ কলকাঠি নাড়ছে; মার্কিন ঋণের সিলিং সম্পর্কিত আলোচনা, ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য ও বৈশ্বিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি। এগুলো ডলারের শক্তিশালী অবস্থার বিপরীতে অস্থিরতার কারণ হতে পারে। এরই মধ্যে কিছু লক্ষণও দেখা দিয়েছে, যার কারণে ফেডকে আবার হয়তো সুদহার বাড়াতে হতে পারে। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের অবস্থানের সঙ্গে আরো কিছু প্রায়োগিক কারণও জড়িত।
ছয়টি প্রধান মুদ্রার মানের বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য পরিমাপ করা হয় ডলার সূচকের মাধ্যমে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মার্কিন ডলার সূচক প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ১০৩-এ পৌঁছেছে। যদিও সেপ্টেম্বরের ১১৪ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট (২০ বছরের সর্বোচ্চ) থেকে ১০ শতাংশ কম। মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ সিলিংয়ের পতন ডলারের মানকে বাড়িয়ে তুলছে।
ঋণের সিলিং হচ্ছে সরকার তার পরিচালনা কার্যক্রমের অর্থায়নের জন্য যে পরিমাণ ঋণ জমা করতে পারে তার সংবিধিবদ্ধ সীমা, যা কংগ্রেস দ্বারা নির্ধারিত। এটি সরকারের ঋণ গ্রহণের ক্ষমতার বিপরীতে একটি আইনি বাধা হিসেবে কাজ করে।
রয়টার্সের তথ্যমতে, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা ঋণ সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীতের বিষয়ে চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। কিন্তু এ ধরনের চুক্তির বিপরীতে হুমকিও আছে। ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার বিপরীতে কংগ্রেস যদি সময়মতো ঋণ সীমা বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা এমন একটি পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে, যেখানে মার্কিন সরকার তার আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণ অক্ষমতার কারণে ঋণখেলাপি হতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন ডলারের মান শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি মূলত ‘সেফ হ্যাভেন’ বা নিরাপদ কারেন্সির চাহিদা বৃদ্ধির দ্বারা চালিত হয়েছে বলে মনে করছেন কমার্জব্যাংকের মুদ্রাবিষয়ক কৌশলবিদ এসথার রিচেল্ট। তিনি আরো বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থা কতটা গুরুতর এবং মার্কিন ঋণের সিলিংবিষয়ক দ্বন্দ্ব বৃদ্ধির ফল কী হতে পারেÍতাও বিবেচ্য।’
তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিপরীতে সৃষ্ট উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও মার্কিন ডলারে চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। চলতি সপ্তাহে চীনের সরকারি তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিলে দেশটির অর্থনীতি প্রত্যাশার তুলনায় খারাপ করেছে।
কানাডাভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের এশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রাবিষয়ক কৌশলের প্রধান আলভিন ট্যান অবশ্য ‘নিরাপদ কারেন্সি’ বিষয়ক যুক্তির বিপরীতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, বিনিয়োগকারীরা যদি উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে শেয়ারের পতন ঘটবে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইনডেক্স এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে উল্লেখযোগ্য পতনের সম্মুখীন হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। ইতিবাচক প্রবণতাও দেখিয়েছে এবং বছরে ৮ শতাংশর বেশি বেড়েছে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে মে মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়িয়েছে ডলারের মূল্যমান। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আসন্ন মন্দা শঙ্কার কারণে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের শেষের দিকে উল্লেখযোগ্য হারে সুদহার দ্রুত হ্রাস করতে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে আলভিন ট্যান খানিকটা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা মনে করি সুদহার আরো বাড়তে পারে। সে সম্ভাবনাও আছে।’
এদিকে বিনিয়োগকারীরা ডলারের বিপরীতে বড়ো রকমের বাজি ধরেছেন। কমোডিটি ফিউচার ট্রেডিং কমিশনের তথ্যানুসারে, গত সপ্তাহে হেজ ফান্ড ও অন্য ফটকাবাজদের নেট শর্ট বেটের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫৬ কোটি ডলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি।