মেয়র আরিফের নির্বাচন বয়কট
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৩, ৯:১১:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: বহুমাত্রিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নগরের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা ২ বারের নির্বাচিত বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কর্মসম্পাদন চুক্তিতে টানা কয়েকবার দেশসেরা মেয়র হবারও বিরল সম্মান অর্জন করেছিলেন। এজন্য জয় করেছিলেন নগরবাসীর হৃদয়, কুড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাও। ‘জনতার মেয়র’ আখ্যা পাওয়া সেই আরিফুল হক এবারের নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিলেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট রেজিস্টারি মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে নগরের কুমারপাড়ায় নিজ বাসভবন থেকে পদযাত্রা করে শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যান। এ সময় তার সামনে শত শত মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। মেয়রের সঙ্গে পদযাত্রায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অংশ নিতে দেখা যায়। মাজার জিয়ারত শেষে পদযাত্রা করে বেলা ৩টা ২২ মিনিটে তিনি রেজিস্টারি মাঠে পৌঁছান।
সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর পর উপস্থিত জনতা হাততালি ও স্লোগান দিয়ে মেয়র আরিফকে স্বাগত জানান। এ সময় বিভিন্ন বয়সী মানুষ ‘আরিফুল হক চৌধুরীকে আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
তবে আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন ইভিএমকে না বলে দিয়েছে, বাংলাদেশের আপামর জনগন যেখানে ইভিএমকে না করছে, সেই জায়গায় সিলেটে তারা নিয়ে এসেছে ইভিএম। এটা কিসের ইঙ্গিত? এটা আরেকটি ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সাথে একেবারে অপরিচিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।
নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে মেয়র বলেন, আপনারা নিরপেক্ষভাবে সিলেটের যেকোন স্থানে ইভিএম-এর ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে জরিপ করে দেখুন। দেখবেন ৯৯ ভাগ মানুষই বলবে তারা ইভিএম চায় না। ইভিএম তারা বুঝে না এবং ইভিএম এর প্রতি তাদের ন্যূনতম আস্থা নেই।
আরিফ বলেন, অনেকেই আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি সেই সুযোগ কাউকে দিতে চাই না। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই।
আরিফুল হক অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই ব্লু প্রিন্ট রেডি হয়ে গেছে। কিভাবে ভোট ডাকাতি করা যায় তার নীল নকশার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল সম্পন্ন হয়েছে। কিছু আজ্ঞাবহ পুলিশ ও কর্মকর্তাদের যোগসাজহে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের জন্য যেসব উপকরণ দরকার তার সবটুকুই এখন বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, এখনো আমি মনোনয়ন কিনিনি, নির্বাচন করব নাকি করব না সেই সিদ্ধান্ত জানাইনি, কিন্তু তার আগেই আমার নেতাকর্মী ও শুভাকাংখীদের একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমনকি অনেককে রিমান্ডে পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। বাসাবাড়ীতে অভিযান চালানো হচ্ছে, হুমকী ভয়ভীতি দেওয়া হচ্ছে। এটাই কী তাদের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশের নমুনা?
মেয়র বলেন, অতীতে যেভাবে দুই দুইবার আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন এবারও আমার কাজের মূল্যায়ন করে আমাকে ভোট দিতে দলে দলে আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন। কিন্তু একবার ভেবে দেখুনতো, আপনাদের দেওয়া ভোট কী যথাযথভাবে কাউন্ট হবে? আপনারা দিবেন এক মার্কায়, কিন্তু ভোট চলে যাবে অন্য জায়গায়। অর্থাৎ আপনাদের দেয়া ভোট, আপনাদের দেয়া রায় অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। বিএনপি আমার রক্তে রন্ধ্রে অস্থি মজ্জায়। আমি আপনাদের আরিফ, বিএনপির আরিফ হয়ে অন্ধকারের গহীনে ফেলতে পারি না নগরবাসীকে। স্পষ্টত এই নির্বাচন হবে প্রহসনের নির্বাচন। সুতরাং এই প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না- তাই আমার দলীয় এই সিদ্ধান্তের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবেগঘন বক্তব্য দেন আরিফ। তিনি সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, সবার ভালোবাসার মধ্য দিয়ে-সবাইকে কাঁদিয়েই তিনি চির বিদায় নিয়েছিলেন। আমাকেও একদিন আমার রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। সবাই শুধু দোয়া করবেন, আমিও যেন সিলেটবাসীর মায়া ও মমতার নিয়েই চিরবিদায় নিয়ে নিতে পারি।
এর আগে ১ মে শ্রমিক দিবসের সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় মেয়র আরিফুল ২০ মে প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছিলেন। সেই হিসেবে তিনি নির্ধারিত দিনেই সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন।