ছেলেকে চোরাকারবারি সাজিয়ে জেলে দেয়ায় পঞ্চায়েত থেকে বহিষ্কার পিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৩, ৬:২০:২০ অপরাহ্ন
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি: ছেলেকে চোরাকারবারি বানিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন এক পিতা- এমন অভিযোগে পঞ্চায়েত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে হারুন মিয়া নামের একজনকে। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে।
পঞ্চায়েত কমিটি জানান, এ বছরের মার্চ মাসে হারুন মিয়া অন্য একজনকে বাঁচাতে তার ২২/২৩ বছরের ছেলে ইব্রাহীমকে চিনি ব্যবসায়ী বানিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হারুন মিয়াকে পঞ্চায়েত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারী জেলা গোয়েন্দা শাখা সিলেট উত্তর জোনের ওসি মোঃ রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী কোম্পানীগঞ্জের টুকেরগাঁও (বৌ বাজার) এর চিনির গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেন। গোডাউন থেকে ৩ হাজার ২৫০ কেজি ভারতীয় চিনি উদ্ধার ও চিনি বহনকারী একটি মোটরসাইকেল চালকসহ আটক করা হয়। পরে ৬ জানুয়ারী মোঃ রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী বাদি হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ভারতীয় চিনি চোরাচালানের মাধ্যমে এনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকেরগাঁও (বৌ বাজার) এর জামাল মিয়ার গোডাউন ও জামাল মিয়ার মেসার্স নকশি ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে রাখার অপরাধে টুকেরগাঁও এর মৃত রুপা মিয়ার পুত্র জামাল মিয়াসহ আরো ২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এজাহারের অন্য আসামিরা হলেন, বনপুর গ্রামের মোঃ সালেহ আহমদ ও বরম সিদ্দিপুরের এখলাছ।
এই মামলার এজাহারে ইব্রাহীমের নাম উল্লেখ করা না থাকলেও ২৯ মার্চ থেকে জেল হাজতে রয়েছে সে। জেলে থাকাকালীন দৈনিক মজুরী ১ হাজার টাকা ও মামলার সকল খরচ বহন করবে জামাল মিয়া এমন চুক্তিতে রাজি হয়ে ছেলেকে জেলে পাঠিয়েছেন হারুন মিয়া বলে জানিয়েছে পঞ্চায়েত।
ইব্রাহীমের ভাই আকরামুল ও খলিল জানায়, ‘জামাল মিয়া নামে একজনের মামলা ভাইকে (ইব্রাহীম) সমঝানো হয়েছে। আব্বা জামাল মিয়ার সাথে চুক্তি করেছেন মামলার সকল খরচ দিবেন জামাল মিয়া। জামাল মিয়াকে যাতে জেলে যেতে না হয় সে জন্য ভাইকে (ইব্রাহীম) জেলে পাঠানো হয়েছে। কারণ জামাল মিয়া একজন সম্মানী লোক। জেলে গেলে তার সম্মানে ধরবে। ভাই (ইব্রাহীম) চিনির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার উপর মামলাও ছিল না। আমার ভাই (ইব্রাহীম) সিলেটে রাজমিস্ত্রীর কাজে ছিলেন। সিলেট থেকে আসার পর জামাল মিয়া আব্বাকে বলেন, তার মামলায় ভাইকে (ইব্রাহীম) জেলে দিলে সব খরচ তিনি দিবেন। জামাল মিয়ার সাথে আব্বার চলাফেরার খাতিরে চুক্তিতে রাজি হয়ে যান। জামাল মিয়াকে তিনি বাবা বলে সম্বোধন করেন যার কারণে আর না করতে পারেননি। চিনি ধরার পর এই আলাপ হয়েছে। সবকিছু হাত করে সপ্তাহ দশ’দিনের জন্য ভাইকে জেলে দেওয়া হয়েছিল। এখনো যা খরচ হচ্ছে সব জামাল মিয়া দিচ্ছেন।’
ইব্রাহীমের পিতা হারুন মিয়া বলেন, কেউ দোষ না করেও যদি সে স্বীকার করে যে সে দোষ করেছে, তাহলে তো সে দোষী। এই ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
ঘোড়ামারা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ফয়জুল বারী ও সহ সভাপতি আব্দুল জলিল জানান, যখন চিনি ধরা পড়ে তখন জামালের ভাই সুহেল জানিয়েছিল জামালের ঘরের ৬০ বস্তা চিনি ও চিনি নিয়ে আসা একজনকে ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় জামাল দৌড়ে পালিয়ে যায়। এর বেশ কয়েকদিন পর দেখি এই মামলায় আমাদের গ্রামের হারুনের ছেলে ইব্রাহীমকে জেলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে খবর নিয়ে আমরা জানতে পারি জামালের সাথে চুক্তি করে হারুন তার ছেলে ইব্রাহীমকে জেলে পাঠিয়েছে। ইব্রাহীম দিনমজুর ছেলে। তাদের নিজস্ব কোন বাড়িঘর নাই। ইব্রাহীম তার পরিবারকে নিয়ে নানার বাড়িতে বসবাস করে। হারুন এখন চুক্তি করে আরেক জনের বুঙ্গার (চোরাকারবারি) মাল তার ছেলের বানিয়ে, ছেলেকে জেলে পাঠিয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের কাজ করবে সে। এজন্য পঞ্চায়েত কমিটি তাকে পঞ্চায়েত থেকে বহিষ্কার করেছে।
ঐদিন ৫ জানুয়ারী ডিবির অভিযানে গ্রেফতার হওয়া চিনি বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক মোঃ সালেহ আহমদ জানায়, ঐদিন জামালের গোডাউনে চিনি দেওয়ার জন্য আমার মোটরসাইকেল ভাড়া করে ২টি চিনির বস্তা নিয়ে গিয়েছিল। জামালের গোডাউনের সামনে যেতেই ডিবি অভিযান দিয়ে ধরে ফেলে।
চিনি ব্যবসায়ী আলী হোসেন ও হোছন বলেন, জামাল মিয়া সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী। আরো ৪/৫ জন আছে, তবে বেশি চিনি জামাল মিয়াই রাখেন। আমরা ২০/২৫ বস্তা দেই। অন্যরা আরো বেশি দেয়। এখন প্রতিদিন জামাল মিয়া দেড়শ-দুইশো বস্তা রাখেন। আগে অনেক বেশি রাখতেন। বিএসএফ এর জন্য এখন আগের মতো চিনি নামানো যায় না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নিতাই রায় বলেন, আমি বিভিন্ন ডকুমেন্টস পেয়ে ইব্রাহীমকে ধরেছি। এর মধ্যে যদি অন্য কিছু থাকে তাহলে সেটা আমার জানা নাই। আমি এ বিষয়ে আরো তদন্ত করবো। যদি এখানে ডকুমেন্টসের বাইরে কিছু থাকে সে বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিষয় নিয়ে যে তার পরিবারকে পঞ্চায়েত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তা আমার জানা নাই। আর মামলার ২নং আসামি জামাল মিয়া ৬ মাসের জামিনে রয়েছে। তাকে তো মামলা থেকে বাদ দেওয়ার কিছু নাই।