ফের উত্তপ্ত রাজনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৩, ১১:২১:২৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ আবার গরম হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশের কোথাও না কোথাও সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এজন্য পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবার বিএনপিকে রাজপথে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এত দিন বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে আসছিল ক্ষমতাসীন দলটি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের সাত-আট মাস বাকি থাকতেই হঠাৎ তারা বিএনপিকে আর কোনো ছাড় না দেওয়ার মতো কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ কর্মসূচি’ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল কার্যত বিএনপিকে কার্যত কঠোর বার্তাই দিচ্ছে।
গত রোববার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় এক সমাবেশে বলেছেন, এখন থেকে শান্তি সমাবেশ নয়, সারা দেশে বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, তা জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার এ ধরনের অবস্থান নিয়ে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের আন্দোলন নস্যাৎ করতে চাইছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নির্বাচনের সাত-আট মাস আগে ক্ষমতাসীন দল যখন বিরোধী দলকে প্রতিরোধ করার কথা বলতে শুরু করে, তখন রাজনীতিতে মুখোমুখি অবস্থা তৈরি হয়। একইভাবে বিরোধী দলও যখন নিজেদের দাবির বিষয়ে অনমনীয় অবস্থানে চলে যায়, তখন সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। এর কারণ, দুই পক্ষই এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে গিয়ে রাজপথেই সমাধান খুঁজছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপির একজন নেতা যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানোটা স্বাভাবিক। এত দিন যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল, তা ব্যাহত হবে এবং মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বর্তমান পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, একজনের বক্তব্যের জন্য পুরো দলকে দোষারোপ করা হচ্ছে, এটি ঠিক নয়। এমনিতেই বড় দুই দল একে অপরকে সহ্য করতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের মধ্যে তিক্ততা আরও বাড়াতে পারে। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে গেলে সংঘাত হতে পারে এবং তা গণতন্ত্র ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
এদিকে, দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের মাঝে সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। এ ঘটনার আগে থেকেই ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। বিএনপির অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা আটকে পুলিশ লাঠিপেটা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। আর পুলিশ বলছে, বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শুধু রাজশাহীতে নয়, এ বক্তব্যকে ঘিরে সারাদেশেই উত্তাপ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে। গতকাল বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপির কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলছে। পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি কার্যালয়ে তারা তালা ঝোলায়নি। দলটির কর্মসূচি ঘিরে নগরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে পুলিশ।
গত ২০ মে রাজবাড়ীতে বিএনপির সমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
একই দিন পটুয়াখালীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ আহত হন।
সিলেটেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর একটি নাগরিক সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সাথে তার প্রচন্ড বাক-বিতন্ডা হয়। পরে মেয়রের অনড় অবস্থানের কারণে পুলিশ কিছুটা নমনীয় হয়। পরের দিন মেয়র আরিফ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এটি নিয়েও সিলেটের রাজনীতির মাঠে উত্তাপ বইছে।
এতে বোঝাই যাচ্ছে, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিএনপি বলছে, ‘সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে’ তারা ক্ষমতার পরিবর্তন চান। অপরদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ‘বরাবরের মতো দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তবে আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করলে হাত ভেঙে দেওয়া হবে। দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের এমন মুখোমুখি অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষকে ক্রমেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে।