থেমে নেই মশার যন্ত্রণা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৩, ৩:০০:৫৪ অপরাহ্ন
# দৃশ্যমান নয় সিসিকের অভিযান
# ডেঙ্গু বাড়ার শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মুনশী ইকবাল: সিলেটে থেমে নেই মশার যন্ত্রণা। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। একটু বৃষ্টি হলেই তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
গত দু একদিনের বৃষ্টির পর মশার যন্ত্রণা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। মশার কামড় থেকে রা পেতে দিনের বেলায়ও বাচ্চাদের মশারি টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে। কয়েল জ্বালিয়ে, ধূপ দিয়ে, জানালায় নেট ব্যবহার করেও মশার হাত থেকে রা পাওয়া যাচ্ছে না। একটু ফাঁক পেলেই ঘরে ঢুকছে মশা। মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশন তাদের অভিযান অব্যাহত আছে জানালেও নগরবাসীর কাছে তা দৃশ্যমান নয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এরই মধ্যে বুধবার নতুন করে ডেঙ্গু বাড়ার শঙ্কা কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অনেকে জানিয়েছেন কাউন্সিলররা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত তাই মশার দিকে তাদের নজর নেই। সিসিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুন থেকে মশার লার্ভা সার্চিং শুরু করা হবে, তাছাড়া নগরীর ১৯, ২৩ সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে তাদের মশক নিধন অভিযান চলছে।
তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত এক মাস ধরে নগরীতে মশার উপদ্রব অস্বাভাবিক বেড়েছে। মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে নগরবাসী আগে যেখানে সন্ধ্যায় দরজা-জানালা বন্ধ করতেন এখন দিনেও প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খুলছেন না।
অনেকে অভিযোগ করেন মশক নিধনে ব্যয় বাড়লেও সুফল মিলছে না। মশার উপদ্রব ভয়াবহভাবে বেড়েছে। যা নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। শিশু, বয়স্কদের পাশাপাশি মশার কামড়ে শিার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। নগরীর দাড়িয়াপাড়া, জল্লারপার, জমতালা, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, আম্বরখানা, মনিপুরিপাড়া, গোয়াইপাড়া, বড়োবাজার, দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়া, মোমিনখলা, শিবগঞ্জ, রায়নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের খায়রুল আমিন জানান, আমাদের এলাকায় সো মিল এবং কারখানা বেশি। এসব সো মিলের কাঠের চিপায় চাপায় পানি জমে মশার জন্ম হয়। সারাবছরই মশার যন্ত্রণা অতিষ্ঠ থাকি। একদিন মশার ওষুধ মারলে অনেকদিন আর খবর নেই। কিন্তু এটি নিয়মিত প্রতিদিন করা উচিত। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মশার যন্ত্রণা মারাত্মক বেড়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। মশার যন্ত্রণায় আসরের আগ থেকে দরজা জানালা লাগিয়ে দিতে হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ দিন বিকেলে কারেন্ট থাকে না। এতে মশার আতঙ্কের সাথে গরমে অন্ধকারে অবস্থা খুব শোচনীয় আমাদের। তিনি বলেন প্রতিবছর বাজেট হয় অভিযান হয় কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেমে নেই। তাই এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর কোনো চিন্তা করা দরকার।
এদিকে এ বছর ডেঙ্গুরোগী বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানায় চলতি বছরে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুরোগী বাড়তে পারে। রোগীর চাপ কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলছে তারা। বুধবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এ আশঙ্কার কথা জানান।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা (অন্য বছরের এ সময়ের তুলনায়) বেশ কয়েকগুণ বেশি। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। সেজন্য আমরা মনে করি আগাম সর্তকতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। সেটি আমরা এরই মধ্যে শুরু করেছি। আমরা দেশবাসীকে এজন্য সচেতন করতে চাই, যাতে সবাই এই মৌসুমে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের মশক নিধন অভিযান অব্যাহত আছে। বৃষ্টির কারণে অভিযান পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। নির্বাচনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি জানান, নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কাউন্সিলররা মশক নিধন অভিযানে সময় কম দিচ্ছেন, তবে আমাদের নিয়মিত কর্মীরা পর্যায়ক্রমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে আগামী ৩ জুন থেকে লার্ভা সার্চিং অভিযান শুরু হবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। বৃষ্টির পানি, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের ব্যাগ, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতলসহ যেখানেই পানি জমে, সেখানেই ডিম পারে এডিস মশা। তাই সবসময় নগর কর্তৃপক্ষের দিকে না তাকিয়ে নিজের আশপাশ এবং ঘরদোরে চাইলেই হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করা যায়। এরমধ্যে কয়েকটি হলো-
কাপড় ধোয়ার বল সাবান অথবা গুঁড়া সাবান ৫ লিটার পানিতে গুলিয়ে সেই পানি মশার লার্ভা আছে এমন পাত্র অথবা গর্তের পানিতে মিশিয়ে দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মশার লার্ভা মারা যাবে। ডিটারজেন্ট লার্ভিসাইডাল হিসেবে কাজ করে এবং লার্ভার খাদ্য নষ্ট করে দেয়।
পানিতে তেলের একটি পাতলা আবরণ দেওয়া হলে মশার লার্ভা দ্রুত মারা যায়। এ জন্য প্রাকৃতিক কিছু তেল যেমন- অভিল অয়েল, ভেজিটেবল অয়েল ও কেরোসিন ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি গ্যালন পানিতে এক টেবিল চামচ তেল ব্যবহার করতে হবে। তবে এই তেল পুকুর কিংবা মাছ থাকে এমন জলাশয়ে ব্যবহার না করাই ভালো।
স্থির পানিতে আপেল সিডার ভিনেগার ঢেলে মশার লার্ভা ধ্বংস করা যায়। তবে এর ফল পেতে কমপে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এই মিশ্রণটি তৈরি করতে ৮৫ ভাগ পানির সঙ্গে ১৫ ভাগ আপেল সিডার ভিনেগার মেশাতে হবে।
ব্লিচিং পাউডার মশার লার্ভা ধ্বংসের জন্য কার্যকর। এক গ্যালন পানিতে এক চামচ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। জমে থাকা পানিতে সেই মিশ্রণ ঢেলে দিলে লার্ভা ধ্বংস হবে।