হাওরে খড় বিপ্লব: উৎপাদন ২ লাখ মেট্রিক টন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৩, ৮:২৩:৪২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: সিলেটে হাওর মানেই সবার আগে আসে সুনামগঞ্জের নাম। হাওর মানেই শুকনো মাঠ আর অথৈ জলরাশি। প্রায় সারাবছর পানির আধিক্য থাকায় এখানে ঘাস উৎপাদন কম হয়। মাঠে মাঠে বিচরণ করে শত শত গরু-মহিষ। ধানের বাইরে পশুপালন এ অঞ্চলের মানুষের একটি বড়ো আয়ের উৎস। প্রায় সাড়ে সাত লাখ গরু মহিষের খাদ্যের জন্য তাই মূলত খড়ের উপর নির্ভর করতে হয় অনেকাংশে।
সুনামগঞ্জে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ল্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে ধান। ইতোমধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে সোনালী ধান গোলায় তুলছেন কৃষকরা। কয়েক বছর পর ভয় ও শঙ্কাহীনভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে বোরো ধান উত্তোলন করেছেন সুনামগঞ্জের কয়েক লাখ কৃষক।
রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় ধান শুকানো শেষ করে গৃহপালিত পশুর প্রধান খাদ্য খড় গাদায় তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। শতভাগ বোরো ধানের পাশাপাশি এ বছর ১৬০ কোটি টাকার ২ লাখ মেট্রিক টন শুকনো খড় উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, সুনামগঞ্জে মোট ধান উৎপাদনের অর্ধেক কাঁচা খড় উৎপাদন হয়। যা থেকে শুকানোর পর এক চতুর্থাংশ গোখাদ্যযোগ্য শুকনো খড় পাওয়া যায়। জেলায় এবছর কাঁচা খড় শুকানোর পর ২ লাখ মেট্রিক টন শুকনো খড় উৎপাদিত হয়েছে। প্রত্যেক কেজি খড়ের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৮ টাকা দরে ২ লাখ মেট্রিক টন খড়ের মূল্য দাঁড়ায় ১৬০ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লণশ্রী ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের কৃষক ফজর আলী বলেন, মানুষের জন্য যেভাবে ধান প্রয়োজন, গরু-বাছুরের জন্য খড় ততটা প্রয়োজন। ধান শুকানো শেষ। এখন খড় শুকিয়ে বাড়িতে নিচ্ছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, সুনামগঞ্জের মোট গরু-মহিষের পরিমাণ ৭ লাখ ৬০ হাজারের উপর। যেহেতু এ জেলা বছরের অর্ধেক সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে তাই এখানে কাঁচা ঘাস কম পাওয়া যায়। যার কারণে এখানে শুকনো খড় প্রধান গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ২ লাখ মেট্রিক টন খড় সুনামগঞ্জের গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের তথ্য সূত্রে, সুনামগঞ্জে এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। যা ল্যমাত্রার চেয়ে ৪৯৫ হেক্টর বেশি। সম্ভাব্য ধান উৎপাদনের ল্যমাত্রা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে উৎপাদনের ল্যমাত্রা অতিক্রম করে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার মেট্টিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। কাটার বাকি আছে আরও ২শ হেক্টর জমির ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, আমাদের শতভাগ বোরো ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। রৌদ্রজ্বল আবহাওয়া থাকায় কৃষকরা সুন্দরভাবে ধান ঘরে তুলছেন। একই সঙ্গে গবাদিপশুর প্রধান খাবার খড় হাওরেই শুকাতে পারছেন। শুকিয়ে ধানের পাশাপাশি খড়ও সংগ্রহ করছেন।