কাদিনায়ানিদের কাফির ঘোষণা দিয়ে সংসদে আইন করার দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২৩, ৯:১৬:৫৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ‘কাফির কাফির কাদিয়ানীরা কাফির’, ‘নবীর পরে নবী নাই, সংসদে আইন চাই’। গতকাল এরকম অসংখ্য শ্লোগানে মুখরিত সিলেট নগরী। কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সিলেটে ওলামা পরিষদ বাংলাদেশের মহাসমাবেশে আয়োজন করে।
দুপুর ১২টায় মহানগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে বিভাগীয় খতমে নবুওয়ত মহাসমাবেশ শুরু হয়। সময় বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশে বাড়তে থাকে উপস্থিতির সংখ্যা। দুপুর ২টার দিকে এটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে। রেজিস্ট্রারি মাঠ ছাড়িয়ে মহাসমাবেশ তালতলা, নাগরি চত্বর, কোর্টপয়েন্টে মিশে যায়। আর একটু পরপর জনস্রোত থেকে শ্লোগান উঠে- ‘নবীর পরে নবী নাই- সংসদে আইন চাই’।
কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে ওলামা পরিষদ বাংলাদেশ সিলেটে এই মহাসমাবেশটি আয়োজন করে। এতে বিভাগের চার জেলার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লী অংশ নেন। বিকাল ৫টায় মুনাজাতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শেষ হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মহসিন আহমদ। পরবর্তী অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেছেন মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন, মাওলানা আলিমুদ্দিন দূর্লভপুরী। সভা সঞ্চালনা করেন মাওলানা রশিদ আহমদ, মাওলনা আহমদ সগীর ও মাওলনা সিরাজুল ইসলাম।
মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আসন্ন সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। এছাড়া মহাসমাবেশে উলামা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের বিতঙ্গলী সরকার বরাবরে কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করেন।
বক্তব্য রাখেন মাওলানা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বরুনা, মাওলানা আব্দুস সোবহান জাউয়া, মাওলানা আব্দুল বছির সুনামগঞ্জী, মাওলানা সামসুদ্দিন দুর্লভপুরী, প্রিন্সিপাল মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, মাওলানা আহমদ আলী চিল্লা, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানিগঞ্জী, মাওলানা মুহিবুর রহমান মিটিপুরী, মাওলানা মাশুক আহমদ সালামী, মাওলানা আহমদ কবির বিন আমকুনী, মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, মাওলানা মুহিবুর রহমান মক্তিরচক, মাওলানা শায়েখ সাইফুল্লাহ, মাওলানা রেজাউল কবির আবরার, মাওলানা নজরুল ইসলাম তৌয়াক্কুলী, মুফতি মুজিবুর রহমান আঙ্গরা, মাওলানা ইউসুফ আহমদ খাদিমানি, মুফতি আবুল হাসান লামারগ্রামী, এডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী, ক্বারী আব্দুল হাফিজ শাহবাগ, মাওলানা এনুমুল হক বহরগ্রাম, মাওলানা হিলাল আহমদ হরিপুর, মাওলানা জিলাল আহমদ শ্রীরামপুরী, মাওলানা আহমদ বিলাল মৌলভীবাজার, প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান এল.এল.বি, মাওলানা তফজ্জুল হক আজিজ, মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ, মাওলানা জুনাইদ কিয়ামপুরী, মাওলানা মুহি উদ্দিন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ, মাওলানা তালিব উদ্দিন, মাওলানা ইমরান আলম, মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, মাওলানা নুর আহমদ কাসিমী, মাওলানা আব্দুর রহমান শাহ জাহান, মাওলানা সৈয়দ মাসরুর আহমদ, মাওলানা সাইদ আহমদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ গাজীনগরী, মাওলানা দিলওয়ার হোসেন, মাওলানা এহিয়া খান, গোয়াইঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ, কানাইঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল্লাহ শাকের, রাজাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট মোহম্মদ আলী, মুফতি এবাদুর রহমান ও ক্বারি হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
মহাসমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। এটা যেভাবে মুসলমানদের মূল বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ঠিক তেমনি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর পর কোন নবী আসবেন না। এটা মুসলমানদের মূল বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বশেষ নবী, এটাই খতেম নবুয়ত। নবীজির পর আর কোনো নবী এ পৃথিবীতে আগমন করবেন না। এ ব্যাপারে কোনো মুসলমান যদি সামান্য পরিমাণ সন্দেহ করে সে মুসলমান থাকতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা- হযরত মুহাম্মদ (স.) শেষ নবী। আর স্বয়ং নবীজী তাঁর হাদিসে বলেছেন, আমিই শেষ নবী। আমার পর আর কোনো নবী আসবেন না।
বক্তারা আরও বলেন- কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারে মদদে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নামে অভিশপ্ত ব্যক্তি নবুয়তির দাবি করে। সেসময় থেকে তার অনুসারীরা নিজেদেরকে আহমদিয়া মুসলিম জামাত দাবি করে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশেও কাদিয়ানি ধর্ম অনুসারীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন যাবত কাজ আন্দোলন চলছে। অনেক নবীপ্রেমি মুসলমান শাহাদাত বরণ করেছেন। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয়- এখন পর্যন্ত মুসলমানের প্রাণের সেই দাবি বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়নি। ইদানিং কাদিয়ানী ধর্মের অনুসারীরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় মসজিদের নামে উপাসনালয় স্থাপন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈমাণ হরণের চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য- কাদিয়ানিরা মুসলমানদের ধর্মীয় শব্দাবলী ব্যবহারের অধিকার রাখে না। খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মের মতো কাদিয়ানী ধর্মালম্বী হিসেবে বসবাস করুক আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই বর্তমানে সরকারে নিকট ৯৫ ভাগ মুসলমানের প্রাণের দাবি- আখেরি নবীর পরে নবী নাই, সংসদে এমন আইন চাই।